প্রতীকী ছবি।
বিষধর সাপের ছোবল খাওয়া এক ব্যক্তিকে হাসপাতালের বদলে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে দাবি। পরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃত নারায়ণ শবর (৪৪) ওরফে লাকড়া আদতে পুরুলিয়ার বলরামপুর থানার দেউলি গ্রামের বাসিন্দা হলেও, বরাবাজারের মুরগাবেড়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ভোরে পেশায় দিনমজুর নারায়ণকে বাড়ির মেঝেয় ঘুমোনোর সময়ে সাপে ছোবল মারে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বলরামপুর শাখার মুখপাত্র দিলীপ ঝা জানান, ওই যুবকের আত্মীয়দের তরফে জানা গিয়েছে, ওই দিন ভোরের দিকে হঠাৎই নারায়ণ চিৎকার করে ওঠেন। দেখা যায়, তাঁর ডান হাতে কিছু কামড়েছে। তড়িঘড়ি আলো জ্বালাতে ঘরের মধ্যে একটি চিতি সাপ নজরে পড়ে।
দিলীপের দাবি, “হাসপাতালের বদলে নারায়ণকে তার পরে এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি দুপুর পর্যন্ত নানা কেরামতি করে কিছু না-হওয়ায়, বাড়ির লোকজনকে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে, শুক্রবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ নারায়ণকে বলরামপুরের বাঁশগড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তারেরা মৃত ঘোষণা করেন।” তাঁর আরও আক্ষেপ, “কোনও ভাবে খবর পেলে আমরাই ওঝার কাছ থেকে ওই ভদ্রলোককে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতাম। সচেতনতার অভাবে একটি জীবন চলে গেল। অতীতেও বাঁশগড় গ্রামের এক বালককে সাপে কামড়েছিল। বাড়ির লোকজন একই ভাবে তাঁকে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। জানতে পেরে আমরাই তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই।” তিনি আরও জানান, বলরামপুর এলাকারই কোনও ওঝার কাছে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে খবর মিলেছে। সে ওঝার খোঁজ করা হচ্ছে। মৃতের স্ত্রী বাসন্তী শবর বলেন, “সাপে কাটার পরে সকলে বললেন, ওঝার কাছে নিয়ে যেতে। তাই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।” কেন শুরুতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না, তার সদুত্তর মেলেনি।
সেই বালক, বর্তমানে যুবক হরি কুমার বলেন, “তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তাম। বাড়ির লোকজনের কাছে শুনেছি, সাপ আমাকে ছোবল দেওয়ার পরে, বাড়ির লোকজন ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। জানতে পেরে এলাকারই এক শিক্ষক কাউকে খবর দেওয়ায়, পুরুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অনেককে বলেছি, সাপে কাটলে কখনও গুণিন বা ওঝার কাছে নয়, হাসপাতালেই যেতে হবে।”
বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবায় পুরুলিয়া এখন আর আগের জায়গায় নেই। বলরামপুর হাসপাতালে পৌঁছলেই চিকিৎসা মিলত। দুঃখের বিষয়, এখনও কিছু মানুষ কুসংস্কার আঁকড়ে রয়েছেন। কী ঘটেছিল খবর নেব। প্রয়োজনে, পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে এলাকায় প্রচার কর্মসূচি চালানো হবে।”