চন্দন রুইদাস।
আট কিলোমিটার দূরেই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু, সাপে কাটা রোগীকে সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বদলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মন্দিরে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় যখন ভ্যানে চাপিয়ে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সব শেষ। বুধবার পাত্রসায়রের কেশবপুর গ্রামের এই ঘটনা ফের সামনে এনে দিল, সাপে কাটা সম্পর্কে এখনও কুসংস্কার রয়ে গিয়েছে ওই এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা চন্দন রুইদাস (৩৫) যখন মাটির ঘরের মেঝেতে ঘুমাচ্ছিলেন, সেই সময় তাঁর ডান হাতের কনুই ও কব্জির মাঝে সাপে ছোবল মারে। তবে, সাপটি দেখা যায়নি বলে দাগ দেখে বাড়ির লোকেরা নিশ্চিত হতে পারেননি। জ্বালা করায় বাড়ির লোকজন তাঁকে স্থানীয় একটি মন্দিরে নিয়ে যান।
চন্দনের স্ত্রী পূর্ণিমা বলেন, ‘‘স্বামীর চিৎকার ঘুম ভেঙে যায়। দাগটা দেখে সাপে কেটেছে বলে বুঝতে পারিনি। তবুও, সারা গায়ে জ্বালা করছিল বলে স্বামীকে ভোরেই মনসাদেবীর মন্দিরে স্নানজল খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই পাড়ার লোকেরা জানান, ওই দাগ সাপের ছোবলের। তাঁরাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু, ততক্ষণে বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার গাড়ি জোগাড় করতেও সমস্যা পড়েন পড়শিরা। তাঁদের মধ্যে সুজন সরকারের আক্ষেপ, ‘‘আমাদের গ্রামে একটা গাড়িও নেই। থাকলে হয়তো চন্দনকে আরও আগেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যেত।’’ শেষে চন্দনকে একটা ভ্যানে চাপিয়ে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, ততক্ষণে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়। পথেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানান স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক।
চন্দনের বাড়িতে রয়েছে প্রতিবন্ধী মেয়ে, ছেলেও নাবালক। স্থানীয় হামিরপুর পঞ্চায়েতের সদস্য গৌতম বাউরি বলেন, “চন্দন দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। তাঁর মৃত্যুতে ভেসে গেল পরিবারটা। একটু সচেতন হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো চিকিৎসা করানো যেত। সেই সুযোগও পাওয়া গেল না।’’
সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সময় যে খুবই দামি সে কথা বলছেন চিকিৎসকেরাও। বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সাপে কাটা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হন, বা না হন, সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা। একটা মুহূর্তও নষ্ট করা যায় না।”
সাপে কাটা সম্পর্কে সচেতন করতে শিবির করে আসছেন ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌম্য সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “কিছু নিয়ম মানলে সাপে কাটা রোগীকে বাঁচানোও সম্ভব। প্রথমত দ্রুততা সঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া দরকার। ক্ষতস্থানের আগে-পরে দড়ি দিয়ে বাঁধা একেবারেই উচিত নয়। রোগী যাতে ভেঙে না পড়েন, সে জন্য সান্ত্বনা দিয়ে যেতে হবে।’’ তাঁর আক্ষেপ, চন্দনের ক্ষেত্রে অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে। প্রথমত, মন্দিরে রাখা ও দ্বিতীয়ত ভ্যানে করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনতে সময়ের অপচয় হয়েছে। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপের উপদ্রব বাড়ে। তাই মশারি খাটানো, বিছানা ঝেড়ে শুতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।