সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেলেও উপভোক্তাদের কাছ থেকে বরাদ্দ টাকা থেকে ভাগ নেন নেতারা। শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রায়ই তোলে বিরোধী শিবির। এ বার সেই একই অভিযোগ নিয়ে বিডিও-র দ্বারস্থ হলেন পাঁচ আদিবাসী মহিলা। অভিযোগ, ইন্দিরা অবাস প্রকল্পে পাওয়া বাড়ি তৈরির টাকা থেকে ১২-১৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। বৃহস্পতিবার দুবরাজপুরের বিডিওর কাছে এমনই অভিযোগ জানালেন গুন্ডবা গ্রামের আদিবাসী মহিলারা।
লক্ষ্মীনরায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতস্থিত ওই গ্রামের চাঁদমণি হেমব্রম, সজনী হাঁসদা, পাকু হাঁসদা, সুমি হাঁসদা এবং ফুলমণি হাঁসদাদের অভিযোগ, তাঁদের প্রত্যেকের নামে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে বাড়ি বরাদ্দ হয় ১৫-১৬ অর্থবর্ষে। প্রতি বাড়ির জন্য বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার টাকা। তাঁরা বলেন, ‘‘তৃণমূলের স্থানীয় নেতা হরিপ্রসন্ন রায়, বামদেব মণ্ডল, হীরালাল মণ্ডল ও কৈলাস চৌধুরীরা আমাদের বলেন বাড়ি প্রতি বরাদ্দ টাকা ৬৩ হাজার। প্রথমে ২০ হাজার টাকা তোলোর পরই প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রথমেই ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে নেয়।’’
ইন্দিরা আবস প্রকল্পের উপভোক্তা আদিবাসী মহিলাদের আরও দাবি, বাকি টাকা ধাপে ধাপে তোলা হলেও প্রথমে ৫ হাজার এবং পরে ৭ হাজার টাকা তাঁরা পাননি। শুধু তাই নয়, গৃহ নির্মাণ করতে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে শ্রম দিলেও প্রাপ্য ১৭ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে মাত্র ১২ হাজার টাকাই পেয়েছেন। তাঁদের দাবি, ‘‘সরকারি আবাসনের জন্য প্রায় ১৭ হাজার টাকা নেতাদের হাতে গিয়েছে।’’ সজনীরা জানিয়েছেন, বিডিও পাশাপাশি একই অভিযোগ দুবরাজপুর থানাতেও করেছেন তাঁরা।
দুবরাজপুরের বিডিও বনমালি রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ মারাত্মক। আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এত করে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে প্রচার করেছি, সরকারি প্রকল্পে সুবিধা পেতে হলে কাউকেই টাকা পায়সা দিতে হয় না। যিনি টাকা দেবেন অপরাধ তাঁরও। কিন্তু মুশকিল হল যখন ঘটনা ঘটেছে কেউ আসছেন না। আমরা ফের প্রচার চালাব প্রয়োজনে।’’ অভিযুক্তদের প্রায় সকলেই অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। হরিপ্রসন্ন রায় বলেন, ‘‘ওঁরা উপভোক্তা, ওঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে। কেন এত টাকা আমাদের দিতে যাবেন ওঁরা। পুরোটাই মিথ্যা অভিযোগ।’’ তবে বামাপদ মণ্ডল নামে আরেক অভিযুক্তের দাবি, ‘‘আদিবাসী ওই মহিলারাই আমাদের বলেছিল দেখেশুনে আমাদের বাড়িগুলো করিয়ে দে। কিছু টাকা মিস্টি খেতে দেব। কাজ শেষে ১-২ হাজার টাকা স্বেচ্ছায় দিয়েছিলেন ওঁরা।’’ তাঁরা দাবি, ‘‘স্থানীয় এক নেতা, যিনি নিজেকে তৃণমূলের বলে দাবি করেন অথচ দলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই, তিনিই ওঁদের উস্কে এমন মিথ্যা অভিযোগ কারিয়েছেন।’’
তৃণমূলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র অভিযোগ সঠিক বেঠিক সেই প্রসঙ্গে যাননি। তিনি বলেন, ‘‘কেউ ব্যক্তিগতভাবে টাকা নিলে সেই দায় তাঁর। বিডিওর কাছে যখন অভিযোগ গিয়েছে সেটা তদন্ত করে দেখার ভার বিডিওরই।’’