মাথার উপর চড়চড় করছে রোদ। তার মধ্যেই মাইল ফলক পিছনে ফেলে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। নেত্রীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটতে গিয়ে এ দিকে ঘেমে নেয়ে একশা তরুণ প্রার্থী। জাঁদরেল পুলিশ কর্তাদেরও একই দশা। পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পুরুলিয়ার হরিপদ সাহিত্য মন্দিরের সামনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যখন থামলেন, পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী দিব্যজ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেওয়ের পাঞ্জাবি এবং আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) জ্ঞানবন্ত সিংহের উর্দি ভিজে চুপচুপে হয়ে গিয়েছে।
সাহিত্য মন্দিরের অদূরে সাহেব বাঁধের কাছে একটি হোটেলে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রচারের যাচ্ছেন তিনি। সূত্রের খবর, বিকেলে এই ম্যারাথন হাঁটার পরও তাঁর উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি। রাতে ফের হোটেলের ছাদে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেন তিনি। কিন্তু, খাবার বেলায় ঠিক এর উল্টো। হোটেল সূত্রের খবর, সকালে শুধু চা আর টোস্ট খেয়ে বেরোন তিনি। রাতে স্যান্ডউইচ আর চিকেন স্যুপ। তিনটে সভায় বক্তৃতা দিয়ে এসে এক কাপ চায়ে গলা ভিজিয়ে নিয়েছিলেন মাঝে এক বার।
সূত্রের খবর, হোটেলটি বেশ মনে ধরেছে নেত্রীর। হোটেলের কর্মীদের ডেকে আলাপ করেছেন। খোঁজ নিয়েছেন, পযর্টক কোথায় কোথায় যান তা নিয়ে। জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলির বিষয়ে তাঁদের খুঁটিয়ে অনেক প্রশ্নও করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা যত বার জেলায় এসেছেন, জেলার পযর্টন পরিকাঠামো নিয়ে কথা বলেছেন। অযোধ্যা পাহাড়, জয়চণ্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তি, পাকবিড়রা-সহ জেলার নানান পযর্টন কেন্দ্রকে ঢেলে সাজানোর কথা বারে বারে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার বাঘমুণ্ডির সভাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। পুরুলিয়া, শুশুনিয়া এবং ঝাড়গ্রাম নিয়ে তাঁর ট্যুরিজম সার্কিট গড়ার পরিকল্পনা ফের এক বার সেখানে শুনিয়েছেন তিনি। পর্যটন প্রিয় নেত্রীর বেড়ানোর উৎসাহে খামতি ছিল না। সোমবার সকালে পুরুলিয়ার আকাশে কালো মেঘের সঙ্গে জোরে হাওয়া বইতে শুরু করে। সেই আবহাওয়ায় হেলিকপ্টার উ়ড়তে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। দল সূত্রে খবর, উদ্বেগের বদলে সেই প্রকৃতি দেখে মন ভালো হয়ে যায় তৃণমূল নেত্রীর। কিন্তু সেই পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। রাজনীতির ময়দানের দিকে নেত্রীকে নিয়ে উড়ে যায় কপ্টার।