অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি, অভিযোগ

মালাগ্রামের বাসিন্দা তথা এলাকায় বিজেপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত টোটন ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘গত কাল রাত তখন ৯টা। অন্ধকার পথে মোটরবাইকে জনাপনেরো দুষ্কৃতী গ্রামে ঢোকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নানুর ও পাড়ুই শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২৭
Share:

অবশেষ: পুড়ল পোল্ট্রি। বৃহস্পতিবার নানুরে। নিজস্ব চিত্র

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় যাওয়ায় গ্রামে ঢুকে বিজেপির কয়েক জন সমর্থকের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল। অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে। বুধবার রাতে পাড়ুইয়ের মালাগ্রাম, কেশবপুরের ঘটনা। একই কারণে গত রাতেই নানুরের ধাপধারা গ্রামে এক বিজেপি কর্মীর পোল্ট্রি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। শাসকদলের তরফে অবশ্য ওই দু’টি অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

মালাগ্রামের বাসিন্দা তথা এলাকায় বিজেপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত টোটন ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘গত কাল রাত তখন ৯টা। অন্ধকার পথে মোটরবাইকে জনাপনেরো দুষ্কৃতী গ্রামে ঢোকে। আমার বাড়িতে আসে দরজা ধাক্কায়। খুলতেই ঢুকে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দিতে থাকে। মারধরও করে।’’ একই অভিযোগ মালাগ্রাম থেকে কিলোমিটার দুয়েক দূরের কেশবপুরের অনুরাধা অঙ্কুর, শিবামী অঙ্কুরদের। তাঁদের নালিশ, ‘‘মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ওরা বলে— কোনও ভোট দিতে যেতে হবে না। বাড়িতে চুপ করে বসে থাকিস। বাইরে বরনোর দরকার নেই।’’ গ্রামবাসীদের কয়েক জন বলেন, ‘‘আমাদের ভোট আমরা নিজেরা যাকে খুশি দিতে চাই। অন্য কেউ বলে দেওয়ার কে! কিন্তু এমন ভয় দেখানো হলে কী করবো।’’

বিজেপির অভিযোগ, গত কাল নরেন্দ্র মোদীর সভা থেকে ফেরার পথে পাড়ুই থানার বাঁধনবগ্রাম মোড়ে দলীয় সমর্থকদের কয়েকটি গাড়ি আটকায় শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

পুলিশ চলে আসায় ওই সব গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। গ্রামে গ্রামে হামলা করা হয় রাতে অন্ধকারে। মারধরে পাঁচ বিজেপি সমর্থক আহত হন বলেও অভিযোগ।

খবর পেয়ে গত রাতেই ওই সব গ্রামে যান বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘গত কাল সন্ধ্যা থেকেই ওই এলাকায় আমাদের দলের কর্মীদের উপরে হামলার খবর পাচ্ছিলাম। জেলার পুলিশকর্তাদের কেউ আমার ফোন ধরেননি। হামলার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছি।’’ অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মিটিং- মিছিল করার অধিকার রয়েছে। অন্যদের সভায় আমরা কখনওই বাধা দিইনি। ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কর্মীরা কোনও ভাবেই জড়িত নন।’’ অন্য দিকে নানুরের ধাপধারা গ্রামে পোল্ট্রিতে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ওই গ্রামে তাদের মজবুত সংগঠন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভার দিন ঠিক হওয়ার পর থেকেই সেখানকার দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা প্রচার অভিযান শুরু করেন। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর সভায় কেউ গেলে তাঁদের ‘দেখে নেওয়া’ হবে বলে হুমকি দিয়েছিল তৃণমূল। তা অগ্রাহ্য করে ওই সভায় যাওয়ার জন্যই স্থানীয় বাসিন্দা শিখা গুপ্তের পোল্ট্রিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

শিখাদেবীর নালিশ, অনেকগুলি মুরগি, বহু বস্তা খাবার সহ পোল্ট্রি পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার ছেলেরা বিজেপির সমর্থক। সে জন্যই তৃণমূলের লোকেরাই পোল্ট্রিতে আগুন লাগিয়েছে।’’ তাঁর ছেলে সপ্তর্ষি গুপ্ত বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরেই তৃণমূলের লোকেরা প্রধানমন্ত্রীর সভায় গেলে দেখে নেওয়া হবে বলে হুমকি দিচ্ছিল। তা না মেনে সভায় গিয়েছিলাম বলেই ওরা আমাদের পোল্ট্রিতে আগুন লাগিয়েছে।’’ বিজেপির নানুর মণ্ডল কমিটির সভাপতি বিনয় ঘোষের অভিযোগ, ‘‘শুধু ওই গ্রামেই নয়, প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার জন্য তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন গ্রামে আমাদের দলের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে।’’ তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমাদের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত নয়। ভোটের আগে সহানুভূতির হাওয়া পালে টানতে ওরা নিজেরাই আগুন লাগিয়ে আমাদের দিকে আঙুল তুলছে।’’ পুলিশ জানায়, এই বিষয়ে এখনও অভিযোগ জমা পড়েনি। পেলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement