শংসাপত্র দেবে কে, উত্তরের খোঁজে কেটেছে দু’বছর

পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের মাংলা গ্রামের ফতু কর্মকার ছিলেন তৃণমূল কর্মী। ২০১৭ সালের ২১ জুলাই কলকাতায় দলের শহিদ দিবসের সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। পথে বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়।

Advertisement

রথীন্দ্রনাথ মাহাতো 

বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৯
Share:

অপেক্ষা: বান্দোয়ান ব্লক অফিস চত্বরে ভারতী কর্মকার। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা ভোটের মুখে সর্বত্র হইহই কাণ্ড রইরই ব্যাপার। ভারতীর মনে হয়, আজ যদি তাঁর স্বামী বেঁচে থাকতেন তাহলে কী হত? এই হয়তো মিছিলে ছুটতেন, ওই হয়তো সভায়...।

Advertisement

পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের মাংলা গ্রামের ফতু কর্মকার ছিলেন তৃণমূল কর্মী। ২০১৭ সালের ২১ জুলাই কলকাতায় দলের শহিদ দিবসের সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। পথে বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। তার পরে দু’-দু’টো বছর কেটে গেল। মৃত্যুর শংসাপত্রের জন্য ছুটে বেড়ানোই সার হয়েছে ফতুর স্ত্রী ভারতীর। দু’জনের সংসারের স্মৃতি আঁকড়ে মাটির ঘরে একা দিন কাটে তাঁর। অনটনে। চাষবাস করে সংসার চালাতেন ফতু। ভারতী এখন দিনমজুরি করেন। প্রতিদিন কাজও জোটে না। বলছিলেন, ‘‘এখনও ছোটাছুটি করে চলেছি। কোথা থেকে ওই কাগজটা পাব, সেটা আজ পর্যন্ত খোলসা হল না।’’

কলকাতায় শহিদ সমাবেশে যাওয়ার জন্য সেই বছর মংলা গ্রাম থেকে রওনা হয়েছিল একটি বাস। অন্য তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে সেখানে ছিলেন ফতুও। রাস্তায় এক জায়গায় বাস থামে। তিনি খাবার কিনতে নেমেছিলেন। তখনই একটি গাড়ির ধাক্কায় জখম হন বলে জানাচ্ছেন ভারতী। ফতুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয়। তার পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে দেহের ময়নাতদন্ত।

Advertisement

তার পরে প্রশাসনের দরজা থেকে দরজায় ছুটে গিয়েছেন ভারতী। সঙ্গে বান্দোয়ানের বাসিন্দা প্রহ্লাদ আগরওয়াল নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। ভারতী মোড়ক খুলে দেখান, আগলে রাখা একতাড়া কাগজ। তার মধ্যে রয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। রয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের চিঠি। তাতে লেখা, মৃত্যুর শংসাপত্র নিতে হবে যেখানে মৃত্যু হয়েছিল সেই হাসপাতাল থেকে। পুরুলিয়ার জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভারতী। তিনি চিঠি দিয়েছিলেন বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটিতে। কাজ হয়নি।

কেন? বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার কৌশিক গড়াইকে ফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের পরে ডেথ সার্টিফিকেটের দরকার হয় না।’’

তবে পুরুলিয়ার আইনজীবীদের একাংশ ও পুলিশের কিছু সূত্র দাবি করেছে, মৃত্যুর শংসাপত্র আলাদা ভাবেই জরুরি। ভারতীকে বান্দোয়ান পঞ্চায়েত সমিতিও ‘ঘোষণাপত্রে’ লিখে দিয়েছে, ‘পরিবারের তরফ থেকে প্রশাসনের নিকট আবেদন করার পরেও মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়া যায়নি। এর ফলে সরকারি সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে’।

কে দেবে শংসাপত্র?

পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, যে এলাকায় মৃত্যু হয়েছে সেই পঞ্চায়েত বা পুরসভা।

বড়জোড়া পঞ্চায়েতে সেই সময়ে প্রধান ছিলেন অর্চিতা বিদ। তিনি এখন বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। অর্চিতাদেবী বলেন, ‘‘ওঁরা মৃত্যুর বেশ কয়েক সপ্তাহ পরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পুরো প্রক্রিয়া অনলাইন হয়ে যাওয়ায় তখন কিছু করার ছিল না। ওঁদের জেলাশাসকের দফতরে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম।’’

ভারতী দাবি করেছেন, তিনি বাঁকুড়ার তৎকালীন জেলাশাসকের কাছেও আবেদন করেছিলেন। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। ওঁরা যোগাযোগ করলে আমরা দ্রুত ওই শংসাপত্রের ব্যবস্থা করে দেব।’’

ফতু থাকতে মিটিং-মিছিলে যেতেন ভারতীও। স্বামীর মৃত্যুর পরে একটু একটু করে সেই যোগাযোগ ফিকে হয়েছে। জানালেন, এই লোকসভা ভোটের মরসুমে বেরোননি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। দল ওঁর পাশে রয়েছে।’’

সহ-প্রতিবেদন: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement