রবিবাসরীয় প্রচারে নলহাটিতে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়। নিজস্ব চিত্র
কেউ সকাল থেকে গ্রামের পথে ঘুরে ছোট ছোট সভা করলেন। কেউ আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে টোটো চালক, আনাজ বিক্রেতার কাছে ভোটটা কেন তাঁকেই দেবেন, তার ব্যাখ্যা দিলেন। জেলার নানা প্রান্তে আপন কৌশলে রবিবাসরীয় প্রচার সারলেন বোলপুর ও বীরভূম কেন্দ্রের বাম-ডান প্রার্থীরা। তবে এলাকায় অনিয়মিত আসা এবং কাজ না করা নিয়ে অনুযোগ ওঠে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়কে নিয়ে। শুধু ভোটের সময় কেন, এমন প্রশ্ন শুনতে হয় বাম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমকেও।
রবিবার দুপুরে নলহাটি ২ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে ছোট ছোট সভা করেন তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়। বলেন, “আপনারা আমার উপরে ভরসা রেখেছেন। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে পুনরায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছেন। ফলে আমি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেব না। যে কাজ করতে পারব সেটুকুই বলব।” এ দিন বারা ১ ও ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুর, শুকরাবাদ, ভবানীপুর, লোহাপুর, জ্যেষ্ঠা, বারা গ্রামে ঘোরেন শতাব্দী। প্রতিটি সভায় উপস্থিত ছিলেন নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মহসীন মণ্ডল, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ আবু জাহের রানা, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্য।
বোলপুর পুরসভা এলাকায় প্রচার করেন রামচন্দ্র ডোম। টোটোচালক থেকে আনাজ বিক্রেতার কাছে তাঁকে ভোট দেওয়ার আর্জি রাখেন। বোলপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁকে দেখে পথ চলতি মানুষ প্রতি নমস্কারও ফেরান। এ দিন সকালে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের জোনাল পার্টি অফিসে আসেন রামচন্দ্রবাবু। জোনাল পার্টি অফিসে পার্টিকর্মীদের সঙ্গে ভোটের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে করতে হালকা টিফিন করেন। তার পরেই ভোট প্রচারে বেরিয়ে পড়েন। পাড়ায় পাড়ায় পায়ে হাঁটেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শতাব্দী সভা করে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন রামপুর গ্রামে কেন এলেন না প্রার্থী। গ্রামের বাসিন্দাদের কারও অভিযোগ, ‘‘প্রথম পাঁচ বছর শতাব্দীকে মাঝে মধ্যে দেখা গেলেও পরে আর দেখা যায়নি। গ্রামের রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। নিকাশি নালা সংস্কার না হওয়ায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বারা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুরামবাটি, মাঠতলা গ্রামের রাস্তা বেহাল। চেকড্যাম্প না থাকায় চাষের সমস্যা রয়েছে।’’ গ্রামের বাসিন্দা রাবেয়া বিবি জানান, অন্য গ্রামে পথবাতি বসানো হলেও তাঁদের গ্রামে বসেনি। গ্রামে এখনও পানীয় জলের পাম্প বসানো হয়নি। ফলে গ্রীষ্মকালে চাপাকল থেকে জল নিতে হয়।
পরামর্শ: রবিবাসরীয় প্রচারে হেঁশেলে ঢুঁ বোলপুর আসনের বামপ্রার্থী রামচন্দ্র ডোমের। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
অভিযোগ মেনেছেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাইতুল শেখ। যদিও তৃণমূলের বুথ সভাপতি আবুল করিম বলেন, “আগে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি ছিল বিরোধীদের দখলে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও কাজ করা যায়নি। এ বার ভোট শেষ হলে কাজ করা হবে।’’ একই ভাবে বোলপুরের শিল্পপল্লি বাধগোরায় এলে রামচন্দ্রবাবুর সামনে অনুযোগ করেন কিছু মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা সখী ধামাল, সপ্তম ধামালরা প্রার্থীকে বলেন, ‘‘ভোটের মুখে আসেন খালি। বাকি সময় তো আপনাদের দেখা পাওয়া যায় না।’’ যদিও প্রার্থী এবং দলীয় কর্মীরা জানান, যে যে কাজ হয়নি তাঁরা ক্ষমতায় এলে মানুষের যা দরকার তা পূরণের চেষ্টা করবেন।
অন্য দিকে, তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ, সুবিধার কথা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশে সিউড়িতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নির্বাচনী সভার মাধ্যমে প্রচার হয়। বেশ কয়েক দিন ধরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নির্বাচনী সভা করা হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় সিউড়ির ৩ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও নির্বাচনী সভা হয়। সভায় ছিলেন সিউড়ির বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়, পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কাউন্সিলর-সহ কর্মীবৃন্দ। সভায় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়। বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরা বেশ কিছু দিন ধরে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এই ধরনের সভা করছি। আগামী দিনে বিভিন্ন অঞ্চলে অঞ্চলে গিয়ে এই সভা করব।’’
বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল রবিবার সকালে আসেন সিউড়ির রামকৃষ্ণ সভাগৃহে। বিভিন্ন বুথ কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বিকেলের পরে রামপুরহাটে কিছু কর্মসূচি ছিল তাঁর। নলহাটির লোহাপুরে বীরভূম লোকসভার বাম প্রার্থী রেজাউল করিম আমজনতার সঙ্গে কথা বলেন। আলাপ করেন ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও।