ধুলোয় ঢাকা জীবন, ডিএমের দ্বারস্থ বাসিন্দারা

অরবিন্দপল্লির বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষা পেরতেই এই এলাকার বাসিন্দাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেছে জাতীয় সড়কের ধুলো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৩১
Share:

ঢাকা: সিউড়িতে এমনই অবস্থা জাতীয় সড়কের। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

বেহাল রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে শয়ে শয়ে গাড়ি চলাচল করায় দিন রাত ধুলো উড়ছে। তার জেরে প্রাত্যহিক জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জাতীয় সড়ক ঘেঁষা সিউড়ির অরবিন্দপল্লির বাসিন্দাদের। বিহিত চেয়ে জাতীয় সড়ক সংস্কারের দাবিতে গত নভেম্বরে তাঁরা অবরোধও করেছিলেন। আশ্বাসেও কাজ না হওয়ায় এ বার সরাসরি জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। সম্প্রতি বীরভূমের জেলাশাসক এবং জাতীয় সড়কের ১২ নম্বর ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে তাঁরা স্মারকলিপি দিয়েছেন।

Advertisement

অরবিন্দপল্লির বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষা পেরতেই এই এলাকার বাসিন্দাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেছে জাতীয় সড়কের ধুলো। খানাখন্দে ভরা রাস্তার উপর দিয়ে দিনরাত যানবাহন যাতায়াত করায় চারপাশে ধুলো উড়ছে। সেই ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে আশপাশের বাড়ি-ঘর। গাছের সবুজ পাতা ধূসর হয়ে গিয়েছে। বাইরে কাপড় শুকোতে দিলেই তাতে ধুলো বসছে। দিনভর জানলা দরজা বন্ধ করলেও বাড়ির ধুলো থেকে মুক্তি নেই। শ্বাসকষ্ট-সহ নানা সমস্যায় বাচ্চা ও বয়স্কেরা।

স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাত কুমার পাল, রাজদীপ রায়, স্নেহাশিস দাস, শুভজিৎ ধরেরা বলেন, ‘‘নভেম্বরে একই দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন সরকারি ও বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারা। তখন আশ্বাস মিলেছিল, দ্রুত রাস্তা সংস্কার করা হবে। যতদিন না সেটা হচ্ছে প্রতিদিন দু’বেলা রাস্তায় জল ছেটানো হবে। কিন্তু কোথায় কী! কোনও কাজ হয়নি। বরং অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ হচ্ছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ নীরব দর্শক। বাধ্য হয়েই জেলাশাসকের কাছে সমস্যা মেটানোর আবেদন জানানো হয়েছে।’’

Advertisement

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়েছি। আমি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিশ্রুতি নিয়েছি যে, যতদিন না রাস্তা ভাল হচ্ছে, ততদিন রাস্তায় তাঁরা দু’বেলা জল দেবেন।’’

মাত্রাতিরিক্ত ভারী যানচলাচল এবং সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বীরভূমের অংশ। দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরিতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে এসে মিশেছে পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়ক। এখান থেকে মুর্শিদাবাদের মোরগ্রাম পর্যন্ত দূরত্ব ১০২ কিমি। দুবরাজপুর থেকে সদাইপুর থানার কচুজোড়ের পর্যন্ত রাস্তা মোটের উপরে ভাল থাকলেও তার পর থেকে সিউড়ি তিলপাড়া পর্যন্ত রাস্তায় বিশাল বিশাল গর্ত। তিলপাড়া পেরিয়ে মহম্মদবাজারের খয়রাকুড়ি মোর থেকে সোঁতশাল পর্যন্ত রাস্তার অবস্থাও খারাপ। ওই রাস্তায় মল্লারপুর থেকে রামপুরহাট শহরের ঢোকার আগে পর্যন্ত কিছুটা ঠিক থাকলেও মাড়গ্রাম মোড়ে রাস্তা বেজায় খারাপ। সবচেয়ে খারাপ বোধহয় নলহাটি থেকে কয়থা পর্যন্ত ৫ কিমি অংশের। ওখানে পিচই উঠে গিয়েছে জাতীয় সড়ক থেকে। এই সড়কের মধ্যে থাকা ৯টি সেতুও দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাস্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই।

জাতীয় সড়কের পাশে থাকা সিউড়ির সরকারি পলিটেকনিক, আইটিআই এবং বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারা মিলিত ভাবে অবরোধ করেন নভেম্বরে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, রাস্তা বেহাল থাকায় কলেজ যাতায়াতে সমস্যা হয়। ভারী গাড়ি চলার ফলে প্রচুর ধুলো হয়। কলেজে ক্লাস করতে সমস্যা হয়। ক্লাসে পড়ার সময় নানা জিনিসে জমে যায় পুরু ধুলোর আস্তরণ। অতিরিক্ত ধুলোয় শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন তাঁরা। অরবিন্দপল্লির বাসিন্দাদের সমস্যা ওই পড়ুয়াদের মতোই।

জাতীয় সড়কের ডিভিশন ১২-র এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিশিকান্ত সিংহ জানিয়েছেন, জাতীয় সড়কের সংস্কার শুরু হয়েছে। ঠিকাদার সংস্থা রাস্তায় যে যে অংশ খারাপ সবই সংস্কার করবে। তবে রাস্তা এতটা খারাপ হওয়ার জন্য অতিরিক্ত ভারী যান চলাচলকেই তিনি দুষছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement