ভাইয়ের জন্য উপহার কিনতে ভিড় বাঁকুড়ার দোকানে। —নিজস্ব চিত্র।
বোনের জন্য পার্স, ভাইয়ের জন্য খেলনা গাড়ি। ভাইফোঁটার বাজার জমে উঠেছে বাঁকুড়ায়। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এ বারে বাজার ছেয়ে গিয়েছে সস্তার বিভিন্ন জিনিসপত্রে। নামজাদা কোম্পানির তুলনায় সে সবের দাম অনেকটাই কম। সাধ্যের মধ্যেই পূরণ হচ্ছে অনেক ভাই-বোনের সাধ।
লালবাজারের যুবক প্রশান্ত পাইন কলেজ ছাত্র। তিনি বলেন, ‘বোন ক্লাস এইটে পড়ে। বন্ধুদের দেখে ওর খুব শখ হয়েছিল একটা নকশাদার পার্সের। আমার কাছে চেয়েছিল। কিন্তু পয়সা ছিল না।’’ হাত খরচা থেকে টাকা বাঁচিয়ে প্রশান্ত এ বার বোনের জন্য কিনেছেন ফোমের তৈরি একটি পার্স। তিনি বলেন, ‘‘খুব দামি কিছু কেনার সাধ্য ছিল না। তবে এটাও দেখতে খুব সুন্দর।’’ দোলতলার বাসিন্দা স্কুলছাত্রী প্রাপ্তি মণ্ডলের দীর্ঘ দিনের হাতঘড়ির শখ একই ভাবে মিটতে চলেছে এই ভাইফোঁটায়। ভাইয়ের জন্য হাতঘড়ি কিনেছেন বাঁকুড়া শহরের কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা অতপি চৌধুরীও।
বাঁকুড়ার পাঠকপাড়া এলাকায় উপহার সামগ্রীর দোকান রয়েছে প্রিয়ব্রত চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘দাম কম হলেও এই সমস্ত জিনিসপত্র দেখতে খুবই চটকদার। বেশির ভাগ চিনে তৈরি। গুণমান খুব ভাল না হলেও অনেকেই এগুলির দিকে ঝুঁকছেন।’’ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এ বারের উপহারের পছন্দ হিসাবে এগিয়ে রয়েছে ছেলেদের ওয়ালেট আর মেয়েদের পার্স। চামড়ার তৈরি পার্সের দাম নিদেন পক্ষে আড়াই থেকে তিনশো টাকা। সেখানে ফোমের পার্স মিলছে ৫০-৬০ টাকাতেই। চোখ টানার মতো কারুকাজও করা থাকছে সেগুলিতে। ছোট ভাই-বোনেদের উপহারের জন্য অনেকে কিনছেন রিমোট কন্ট্রোলে চলা খেলনা গাড়ি। নামজাদা কোম্পানির সেই রকমের খেলনা ৪০০ টাকার কমে মেলে না। ১৫০-২০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে চিনে খেলনা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি। সস্তায় মিলছে পুতুলও। এমনিতেই দাম কম হওয়ায় দরাদরিও বিশেষ করতে হচ্ছে না বলে জানান ক্রেতাদের একাংশ।
ভাইফোঁটার উপহার হিসেবে হাতঘড়ি বা শো-পিসের জনপ্রিয়তা অনেক দিনের। এই সব ক্ষেত্রেও বাজার ছেয়েছে সস্তার জিনিসে। শহরের মাচানতলা এলাকার ব্যবসায়ী ইন্দ্রজিৎ দে জানান, বিভিন্ন ব্র্যান্ডেড শো-পিসের দাম শুরুই হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা থেকে। অন্যদিকে সস্তার শো-পিস পাওয়া যায় ৫০-৬০ টাকাতেই। সেগুলিই কিনেছেন অনেকে। ১৫০ টাকার হাতঘড়িও বিক্রি হয়েছে অনেক। শহরের রক্ষাকালীতলা এলাকার ব্যবসায়ী প্রশান্ত সেন জানান, ভাইফোঁটার উপহার হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে পেন্সিল বক্স, মোমরঙের বাক্স। তিনি বলেন, ‘‘কতদিন টিকবে তা নিয়ে কেউই খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না। দেখেই পছন্দ করে কিনে ফেলছেন অনেকে।’’
অবশ্য এই সমস্ত উপহারের টিকে থাকার গুণটা আসল নয় বলেই মনে করেন ব্যবসায়ী সৌমেন্দু রক্ষিত। বাঁকুড়া শহরের নিমতলায় একটি খেলনার দোকান রয়েছে তাঁর। সৌমেন্দুবাবু জানান, ছোট ছোট অনেক ছেলেমেয়ে বাবা-মা বা দাদা-দিদির সঙ্গে দোকানে আসে। খেলনার জন্য ওদের কাছে বায়না শুরু করে। তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় ওদের চোখে যে মায়াটা জড়ানো থাকে, সেটা খেলনার দাম বা খেলনার গুণমান দিয়ে মাপা যায় না। দামের জন্য বাচ্চাদের আবদার পূরণ করতে না পারায় সঙ্গে থাকা বড়দের কষ্টটাও আমরা বুঝতে পারি। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে, সস্তার খেলনা নষ্ট হয়ে গেলেও ভালবাসাটা ঠিক টিকে থাকে।’’
শহরের এক দিদিও একই সুরে বলেন, ‘‘ভাই বড় হয়ে গেলেও তার শখ-আহ্লাদগুলো দিদিদের কাছে সেই ছেলেবেলার মতোই থেকে যায়। শখের কিছু কিনে দিতে পারলে খুব ভাল লাগে। টাকার হিসেবে তার বিচার চলে না।’’