প্রতীকী ছবি।
আদ্রা ডিভিশনে লোকাল ট্রেন চালু করার দাবিতে আজ, মঙ্গলবার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামফ্রন্ট। কলকাতা লাগোয়া এলাকায় লোকাল ট্রেন চলা শুরু হলেও কেন পুরুলিয়ায় হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য-বিধি মেনে লোকাল ট্রেন চালানোর দাবিতে আদ্রা ডিভিশনের ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে বিক্ষোভ অবস্থান করবেন কর্মীরা। বামফ্রন্টের তরফে দাবি জানানো হবে আদ্রার ডিআরএমকে।”
আদ্রা-আসোনসোল, আদ্রা-খড়্গপুর, আদ্রা-পুরুলিয়া ও আদ্রা-গোমো শাখায় লোকাল ট্রেন দ্রুত চলুক, এই দাবি নিত্যযাত্রীদেরও। আসানসোল ও বার্নপুরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কারখানা খুলে গিয়েছে। সেখানে শ্রমিকের কাজ করেন রঘুনাথপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন। ট্রেন বন্ধ থাকায় কাজে যেতে পারছেন না তাঁদের অনেকেই। বেড়োর প্রদীপ বাউড়ি বলেন, ‘‘এখান থেকে সরাসরি বার্নপুরে যাওয়ার বাস নেই। তাই কাজে যেতে পারছি না। এলাকায় যতটুকু দিনমজুরি মিলছে, তার ভরসাতেই কোনও ভাবে সংসার চলছে।”
এক দিন অন্তর ১২০ কিলোমিটার যাতায়াত করে রঘুনাথপুর থেকে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে যাচ্ছেন সিনির একটি বেসরকারি হোটেলের ম্যানেজার রঘুনাথপুরের তপন মজুমদার। তপনবাবু আদ্রা-ভাগা শাখার রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার ফোরামের জোনাল সম্পাদক। তিনি বলছেন, ‘‘নিত্যযাত্রীদের সমস্যার কথা ভেবে এ বার আদ্রা ডিভিশনও লোকাল ট্রেন চালানো শুরু করা উচিত।’’
‘রেলওয়ে ইউজ়ার্স অর্গানাইজেশন’-এর জেলার যুগ্ম সম্পাদক বাঁকুড়ার দেবু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আদ্রা ডিভিশনে প্রায় চার হাজার নিত্যযাত্রী রয়েছেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত ট্রেন চালু করা দরকার। আর সেটা স্বাস্থ্য-বিধি মেনে।’’ শীতে বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর থেকে চাষিরা আনাজ নিয়ে ট্রেনে পুরুলিয়ায় আসেন। তা-ও বন্ধ। ট্রেন চালু হলে আনাজের দাম কিছুটা কমতে পারে বলে মত অনেকেরই।
ট্রেন না চলা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার পুরুলিয়ায় লোকাল ট্রেন চালানোর জন্য রেলকে কোনও প্রস্তাবই দেয়নি। বিজেপির দুই সাংসদও দুই জেলায় লোকাল ট্রেন চালানোর জন্য রেলের কাছ প্রস্তাব দেননি। কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষমতাসীন দুই দলের উদাসীনতাতেই ভুগতে হচ্ছে মানুষকে।’’ তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলার মুখপাত্র নবেন্দু মাহালির পাল্টা দাবি, ‘‘কোথায় ট্রেন চলবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় রেল। রাজ্যের তাতে কোনও ভূমিকা থাকে না। বিজেপির দুই সাংসদ কোনও ভূমিকাই পালন করেননি।”
অভিযোগ উড়িয়ে পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা একাধিক বার রেলমন্ত্রীকে বলেছি। কিন্তু রাজ্য সরকারের সহযোগিতা না থাকাতেই দুই জেলায় ট্রেন চালু করতে পারছেন রেলমন্ত্রক।” বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, ‘‘পুরুলিয়া এক্সপ্রেস এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লোকাল ট্রেন চালানোর ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যেই আদ্রার ডিআরএমের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছি। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জিএমের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তাঁর কাছে লিখিত ভাবেও দাবি জানাব।’’
আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, লোকাল ট্রেন চালানো শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন জোনাল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে কোনও নির্দেশ ডিভিশনে এখনও আসেনি।