বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে নিজস্বী তোলার হিড়িক আইনজীবীদের মধ্যে। আদালত চত্বরে ভিড় করে ছবি তোলেন সবাই। মধ্যমণি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক নির্দেশ দেওয়া কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পুরুলিয়ার জ়োনাল জাজ হিসাবে সদ্য দায়িত্ব পেয়েছেন। পুরুলিয়া জেলা আদালতের আইনজীবীদের কাছে খবর ছিল শনিবার সফরে আসছেন বিচারপতি। শনিবার সকালে তিনি আদালত চত্বরে পৌঁছতেই শুরু হয় হুড়োহুড়ি। চিত্রতারকাদের চোখের দেখা দেখতে, তাঁদের সঙ্গে একটা ছবি তুলতে ভক্তদের মধ্যে যেমন উন্মাদনা দেখা যায়, তেমনটাই হল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে। তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। আইনের পড়ুয়া থেকে আইনজীবী— সবাই বিচারপতির সঙ্গে এক ফ্রেমে থাকার জন্য ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। যদিও এই ‘আবেগে’ গা ভাসাননি তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা বরং ‘নিরাপদ দূরত্ব’ তৈরি করেছেন। এমনকি, এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোতেও ‘বারণ আছে’ বললেন কেউ কেউ।
সকালে পুরুলিয়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নামার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জেলা আদালতে পৌঁছন সকাল ১০টা নাগাদ। পুরুলিয়া জেলা আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, জ়োনাল জাজ হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর বিচারপতি তাঁর অধীনে থাকা পুরুলিয়া জেলা আদালত ঘুরে দেখতে আসেন। জেলা আদালতের নতুন ভবন ঘুরে দেখেন তিনি। সেখানে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থার সূচনাও হয় বিচারপতির হাত ধরে। তার পর বার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে একটা ছোট্ট বৈঠক। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় পুরুলিয়া জেলা আদালতে কাটিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আর এই সময়ের মধ্যে বার বার চোখে পড়ল বিচারপতির সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িকের দৃশ্য। এ সব দেখে এক আইনজীবী তো বলেই ফেললেন, ‘‘এক জন বিচারপতির সঙ্গে ছবি তোলার এমন উন্মাদনা অন্য কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।’’
আইনজীবীরা ভিড় করে ছবি তুলছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। —নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়া জেলা আদালতের আইনজীবী রাজীব দত্তের কথায়, ‘‘উনি (বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়) যে ভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন, যে ভাবে উনি কাউকে রেয়াত না করে রায় দিয়েছেন, সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, তার জন্যই এই উন্মাদনা।’’
আইনের ছাত্রী শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারপতির সঙ্গে ছবি তুলেছেন। একমুখ হাসি নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘উনি যে শুধু একজন বিচারপতি তা নয়, উনি যে সব নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো আইনের শিক্ষার্থী হিসাবে আমাদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।’’ কেমন লাগল বিচারপতিকে? শ্রুতির জবাব, ‘‘সর্বোপরি উনি এক জন অমায়িক মানুষ। এটাই বুঝলাম।’’
বিচারপতিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রসঙ্গে পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ মহাপাত্র বলছেন, ‘‘উচ্চ আদালতের নিয়ম অনুযায়ী জ়োনাল জাজ হিসাবে অভিজিৎবাবু এসেছিলেন। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। আর আইনজীবীদের উন্মাদনা... যাঁরা করেছেন, তাঁরা করেছেন। তার সঙ্গে রায় (মামলার) বা বার অ্যাসোসিয়েশনের কোনও সম্পর্ক নেই।’’