খাদানে ধস নিয়ে বাড়ছে ধন্দ

কালিকাপুরের অবৈধ খাদানে কয়লা তুলতে নেমে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানা গেল না এখনও। বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের ওই এলাকায় একটি অবৈধ খাদানে বৃহস্পতিবার ধস নামার খবর মিলেছিল স্থানীয় সূত্রে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেজিয়া ও রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

মেজিয়ার কালিকাপুরের একটি অবৈধ খাদানে শুক্রবারও কয়লা তোলা চলছে। অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

কালিকাপুরের অবৈধ খাদানে কয়লা তুলতে নেমে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানা গেল না এখনও। বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের ওই এলাকায় একটি অবৈধ খাদানে বৃহস্পতিবার ধস নামার খবর মিলেছিল স্থানীয় সূত্রে। শোনা গিয়েছিল, বীরভূমের দুবরাজপুরের বিভিন্ন গ্রামের বেশ কিছু শ্রমিক ওই ধসের কবলে পড়েন। বেশ কয়েক জনের চাপা পড়ে থাকার খবরও ছড়ায়।

Advertisement

প্রথম থেকেই এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেনি জেলার পুলিশ ও প্রশাসন। যদিও সংবাদমাধ্যমে নড়াচড়া হতেই খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে প্রশাসনিক মহল। শুক্রবার বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “এই ধরনের কোনও ঘটনার খবর আমাদের কাছে আসেনি। তবে, গুঞ্জন শুনে মেজিয়া থানার পুলিশকে ঘটনাস্থলে গিয়ে খবর নিতে বলি। পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। ঘটনার কোনও সত্যতা মেলেনি।’’ জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুও বলেন, “খনিতে ধসের কোনও খবর আমার কাছে নেই।’’

পুলিশ-প্রশাসন অস্বীকার করলেও বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, অবৈধ খাদানের দুর্ঘটনায় জখম ছ’জনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই মেজিয়ার ও-পারে রানিগঞ্জের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল। শুক্রবার তাঁদের মধ্যে তিন জনকে পরিজনেরা বীরভূমে নিয়ে চলে যান। এ দিন বিকেল পর্যন্ত ওই নার্সিংহোমেই ভর্তি রয়েছেন আরও তিন আহত। তাঁদের এক জন জানান, দুবরাজপুরের বাগুইজোড়় পঞ্চায়েত এলাকার একটি গ্রামে তাঁর ও অন্য আহতদের বাড়ি। তাঁর কথায়, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে কালিকাপুরে কাজ করছিলাম। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ খনির পাশেই আগুন পোহাচ্ছিলাম। আচমকা বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। জ্ঞান হারাই। তার পরে কী হয়েছে, জানি না।’’

Advertisement

ঘটনা হল, দামোদর নদের চর সংলগ্ন কালিকাপুর এলাকায় একের পর এক পরিত্যক্ত কয়লা খাদান রয়েছে। ওই খাদানগুলি থেকে রমরমিয়ে অবৈধ ভাবে কয়লা তোলা হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, দামোদরের পাড়ে পরপর কয়লা খাদান। বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে খাদানের ভিতরে যাওয়ার সুড়ঙ্গ। কয়েকটি খাদানের মুখ থেকে গ্রামবাসীদের কয়লা সংগ্রহ করতেও দেখা গেল। কেউ বস্তায় করে সাইকেল চাপিয়ে, কেউ বা ঝুড়িতে বোঝাই করে মাথায় তুলে কয়লা নিয়ে যাচ্ছেন। এমনই একটি খাদানের সুড়ঙ্গের সামনে সাইকেল ফেলে রেখে ভিতর থেকে বস্তায় কয়লা তুলতে দেখা গেল এক ব্যক্তিকে। জিজ্ঞাসা করায় নিজেকে স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে দাবি করলেন। বললেন, “বাড়ির জ্বালানির জন্য কয়লা সংগ্রহ করছি। মাঝে মাঝেই এখান থেকে কয়লা নিয়ে যাই। জ্বালানির খরচ বাঁচে।’’ খাদানে দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এ রকম কোনও ঘটনা শুনিনি। বছর তিনেক হবে এখানে কয়লা তোলা বন্ধ রয়েছে।’’ এই খাদানের পাশের একটি খাদানের সুড়ঙ্গের দিকে ঝুড়ি নিয়ে যেতে দেখা গেল স্থানীয় দুই মহিলাকে। তাঁদেরও দাবি, “ধস নেমে কেউ মারা গেছে, এমন খবর শুনিনি। আমরা বাড়ির কাজের জন্য কয়লা সংগ্রহ করি এখান থেকে।’’

খাদান থেকে বেরিয়ে স্থানীয় অর্ধগ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে বিভিন্ন কাজে আসা মানুষের জটলা দেখা গেল। পঞ্চায়েত প্রধান তৃপ্তি মণ্ডল বা উপপ্রধান মলয় মুখোপাধ্যায়, কেউই পঞ্চায়েতে ছিলেন না। স্থানীয় নেতারাও ধসের কথা মানতে চাননি। মেজিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, তৃণমূলের বলরাম সরকার দুর্ঘটনার খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সিপিএমের মেজিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক জীতেন ভান্ডারি মন্তব্য করতে চাননি। বিজেপি-র মেজিয়া ব্লক সভাপতি চিত্তরঞ্জন রায় বলেন, “এই ঘটনা কতটা সত্যি, তা জানা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement