স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চত্বরেই ছোট গাড়ির স্ট্যান্ড। পাশেই নিয়মিত হাট বসে। গজিয়ে উঠেছে মাছ মাংসের দোকানও। বেলিয়াতোড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিজস্ব জায়গার একটা বড় অংশই অবৈধ নির্মাণে ছেয়ে গিয়েছে। হাসপাতাল চত্বর পাঁচিল দিয়ে ঘেরার প্রকল্প নিয়েও কাজ শুরু করতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতর। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের জায়গা দখল মুক্ত করতে প্রশাসনের দারস্থ হলেন সিএমওএইচ।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বেলিয়াতোড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গা থেকে অবৈধ নির্মাণ হাঠাতে প্রশাসনিক পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছন বাঁকুড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ রক্ষা করতেই জমিটিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা দরকার। কিন্তু ওই জায়গায় অবৈধ নির্মাণ থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। প্রশাসনকে জানিয়েছি।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলিয়াতোড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রায় ৪.৭১ একর জমির মধ্যে ১.৭১ একর জমি বেদখল হয়ে রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চত্বরে ৫০টিরও বেশি দোকান ও বেশ কিছু ঘরবাড়ি রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ছোট গাড়ির স্ট্যান্ড। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গা দখল করে বাজারহাট বসে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, খোলা জায়গার সুযোগ নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে রোজ রাতে নেশার আসরও বসে। বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কালীদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। স্থানীয় মানুষজন ক্ষুব্ধ। অনেক ব্যবসায়ীও সমস্যাটি বোঝেন।”
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরতে প্রায় ৩৮ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। অবৈধ নির্মাণ ভাঙার পরেই পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হবে। মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা বলেন, “স্বাস্থ্যদফতর চিঠি দিয়ে বেলিয়াতোড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গা দখল মুক্ত করার আবেদন জানিয়েছে। শীঘ্রই অভিযানে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’
কয়েক সপ্তাহ আগেই মহকুমাশাসকের নেতৃত্বে বেলিয়াতোড় তেমাথা মোড়ে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার অভিযান চালায় প্রশাসন। বহু পাকা নির্মাণ ভাঙা হয়। বড়জোড়ার বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তী ওই অভিযানের প্রতিবাদ করতে এলেও এলাকার ব্যবসায়ীদের একাংশ প্রশাসনের পাশে থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিতে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার প্রসঙ্গে সুজিতবাবু বলেন, “ওই এলাকায় এমন কিছু নির্মাণ রয়েছে যা বৈধ কি না এখনও বিচারাধীন। সেগুলি ভাঙা চলবে না।” ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনেরও দাবি তুলেছেন তিনি।
মহকুমাশাসক বলেন, “সাধারণ মানুষের স্বার্থে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবার মান বাড়াতে এলাকাটি দখল মুক্ত করতে হবে। যা হবে, নিয়ম মেনেই হবে। কেউ প্রশাসনের কাজে বাধা দিতে এলে বরদাস্ত করা হবে না।” বেলিয়াতোড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নরেন আঁশের কথায়, “অবৈধ ভাবে ব্যবসা করা আমরা সমর্থন করি না। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র দখল মুক্ত করতে অভিযান হবে বলে খবর পাইনি। প্রশাসন আমাদের জানালে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলব।”