প্রতীক্ষার দু’পার জুড়ল লালপুল

এ দিন সকাল থেকে তাই, ওই নতুন সেতু রেল লাইনের উপরে ‘চাপানোর’ কাজ দেখতে আশেপাশের হাজার পাঁচেক মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কয়েক দশকের দাবি মেটায় স্বাভাবিক ভাবে খুশি এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা,

বোলপুর শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০১:২৯
Share:

(শনিবার বোলপুরে ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী)

সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের উপরে অবশেষে শনিবার বসানো হল সম্প্রসারিত নতুন লালপুল।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকে তাই, ওই নতুন সেতু রেল লাইনের উপরে ‘চাপানোর’ কাজ দেখতে আশেপাশের হাজার পাঁচেক মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কয়েক দশকের দাবি মেটায় স্বাভাবিক ভাবে খুশি এলাকার বাসিন্দারা। পুরোপুরি সেতু খুলে গেলে, একইসঙ্গে দুটি বাস বা ট্রাক একইসঙ্গে পারাপার করতে পারবে। এতদিন ধরে যে যানজটে জেরবার হত সেতু সংলগ্ন এলাকা, তা আর হবে না বলেই মনে করছে রেল ও স্থানীয় প্রশাসন। কয়েক দশক ধরে, সঙ্কীর্ণ ওই সেতুর সম্প্রসারণের দাবিতে সরব হয়েছিলেন এলাকার বিভিন্ন মহল।

পূর্বরেল আগেই জানিয়েছিল, শনিবার এবং আজ রবিবার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত চার ঘণ্টা সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের ওপর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। শনিবার থেকে রেললাইনের উপর ওই সেতুর বসার কথা ছিল। টু লেন ওই সেতুর দু’ দিকে প্রায় ১.৪ মিটার চওড়ার ফুটপাথ পরীক্ষামূলক ভাবে খুলে দেওয়ার কথা জানায় রেল। এ দিনই সেই মতো সেতু বসানোর কাজ চলে। পূর্ব রেলে হাওড়া ডিভিশনের নির্মাণ বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লালপুল হচ্ছে ‘টু লেন রোড ওভারব্রিজ’। ১৩ মিটার চওড়া এবং ২৮ মিটার লম্বা এই সেতুতে দু’পাশে দেড় মিটারের রাস্তা থাকবে ফুটপাথ জন্য। সম্প্রসারণ কাজের জন্য ৮ কোটি ৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৩৫৪ টাকা ব্যয় বাবদ খরচ ধরা হয়।

Advertisement

বোলপুরের অন্যতম লাইফলাইন বলে পরিচিত সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের উপরের এই লালপুল সম্প্রসারণের আর্জি জানানো হয়েছে বহু দফতরে। শুধু এই বোলপুর-শান্তিনিকেতনেরই নয়, বীরভূমের সঙ্গে আশেপাশের একাধিক জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সেতুটি। তাই এই সেতু সম্প্রসারণের আর্জি জোরাল হচ্ছিল দিন দিন। কেন না, শহরের পরিধি বাড়তে থাকায় ওই সেতুর উপর যান চলাচলের চাপ বাড়ায় যানজটে ভোগান্তি বাড়তে থাকে বাসিন্দাদের। প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা নাকাল হচ্ছিলেন শহরের বাসিন্দারা। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ আনুষ্ঠানিক ভাবে সঙ্কীর্ণ রেলসেতু লালপুল সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে রেল দফতর। চলতি বছরের প্রথম দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, কখনও অতিবৃষ্টি আবার কখনও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এত দিন চালু হয়নি। ফলে যানজট এবং সেই কারণে চরম ভোগান্তি সইতে হয়েছে বাসিন্দাদের। লালপুল সম্প্রসারণের কাজে এই অহেতুক দেরিতে, সরব হয় একাধিক মহল। এরপরই সম্প্রসারণের কাজে জোরকদমে হাত দেয় রেল দফতর।

দিন কয়েক আগে, পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশন (কন্সট্রাকশন) ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সেন, সহকারী ইঞ্জিনিয়ার এ হক এবং ওই সংশ্লিষ্ট সম্প্রসারণ কাজের সুপারভাইজার পবন কুমার কে নিয়ে আলোচনায় বসেন বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত। সম্প্রসারণের কাজের গতি, শহরের বাসিন্দাদের ক্ষোভ এবং সমস্যার কথা নিয়ে আলোচনা হয় বিস্তর। নিয়ম মেনে, সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত করার আর্জি জানান পুরপ্রধান সুশান্তবাবু।

এ দিন সকাল থেকে কার্যত দর্শনীয় স্থানের চেহারা নিয়েছিল বোলপুরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের লালপুল এলাকা। রিক্সাচালক, টোটোচালক, থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ফুলডাঙার বাসিন্দা, পেশায় টোটো চালক রবীন্দ্র রায়, দুধের ব্যবসায়ী কৌশল রায়, গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা কার্ত্তিক মাহাত থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর অস্থায়ী কর্মী মুক্তিপদ দাস, রিক্সা চালক তাপস দাসরা স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। তাঁরা জানান, ‘‘এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। সেতু যখন লাইনের উপর বসেছে, আজ নাহলে দু’ মাস পরেও চালু হবে।’’

এ দিন সেতু বসানোর পর স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে ওই রাস্তা ব্যবহারকারীদের স্বস্তি ফিরেছে। মুলুকের বাসিন্দা পেশায় ঠিকাদার শেখ অপু বলেন, ‘‘শুধু সেতু বসানো দেখার জন্য কাজে ঘণ্টা খানেক দেরিতে যাব। আমি একা নই, বহু মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষা ছিল। তাই মেলার মতো জমায়েত।’’ বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “প্রায় ১২ মিটারের এই সেতু চলাচল যোগ্য করার জন্য মাস খানেক সময় লাগবে। পথচারি এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য কয়েক দিনের মধ্যে ফুটপাথ খুলে দেওয়া হবে।”

রেলের ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সেন, সুপারভাইজার পবন মিশ্র-সহ একাধিক রেল কর্ম কর্তার উপস্থিতিতে এ দিন রেল লাইনের ওপর তোলা হয় সেতু। তাঁরা জানান, আজ রবিবার কাজ চলবে। তবে সেতুর উপর ফুটপাথ কিছু দিনের মধ্যেই চালু হবে। এবং জুন মাসের শেষ সপ্তাহে যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement