রাইপুরে সহ-সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষকে মার

শহিদ সমাবেশের পোস্টারে যুব সংগঠনের ব্লক সভাপতির নাম নিয়ে কোন্দলে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, এক কর্মাধ্যক্ষ ও প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলেকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:২১
Share:

গোলমালের পরে মটগোদা বাজারে পুলিশের টহল। রবিবারের নিজস্ব চিত্র।

শহিদ সমাবেশের পোস্টারে যুব সংগঠনের ব্লক সভাপতির নাম নিয়ে কোন্দলে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, এক কর্মাধ্যক্ষ ও প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলেকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। রবিবার সকালের এই ঘটনায় গোটা রাইপুর ব্লক এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাইপুর, মটগোদা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

Advertisement

মারধরে আহত হন রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিনাথ মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পল্টু রজক, যুব তৃণমূল কর্মী বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় ও প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে বিবেকানন্দ খাঁ। রাইপুর গ্রামীণ হাসপাতাল ও বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রহৃতদের চিকিৎসা করানো হয়। ঘটনার পরেই এলাকায় পুলিশ বাহিনী টহল দিতে শুরু করে। খাতড়া মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য দাবি করেন, “ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ মটগোদায় গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এখনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রাইপুরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো ও পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিনাথ মণ্ডলদের সঙ্গে ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি রাজু সিংহ, ব্লকের আর এক দাপুটে নেতা অনিল মাহাতোর বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরেও দুই গোষ্ঠী আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল। সেই বিরোধ এখনও মেটেনি। রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতাসীন রয়েছে জগবন্ধুবাবুর গোষ্ঠী। স্থানীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সমিতির কর্তৃত্ব নিয়ে দুই গোষ্ঠীর কাজিয়া এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এ দিন জগবন্ধুবাবুর অনুগামীদের উপরে রাজু সিংহ ও অনিল মাহাতোর গোষ্ঠীর লোকেরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে মটগোদা এলাকায় প্রথম আক্রান্ত হন শান্তিনাথবাবু। তিনি স্থানীয় একটি দোকানে বসেছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী ডেকে অমৃতপালে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁর উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। একই সময়ে মটগোদা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তারাপদ খাঁয়ের ছেলে পেশায় ব্যবসায়ী বিবেকানন্দ খাঁকেও মারধর করা হয়। তারপর একদল বাইক বাহিনী রাইপুরে এসে থানাগোড়ার সামনে একটি দোকানে আড্ডা মারতে থাকা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পল্টু রজক ও যুব তৃণমূল কর্মী বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়কেও মারধর করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা পল্টুবাবু ও বাপ্পাকে উদ্ধার করেন। শান্তিবাবুকেও উদ্ধার করে রাইপুরে নিয়ে আসা হয়।

এ দিন চেষ্টা করেও শান্তিনাথবাবু ও পল্টুবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর অভিযোগ, “এ দিন সকালে মটগোদা মোড়ে একটি দোকানে বসেছিলেন শান্তি। ২১ জুলাইয়ের শহিদ সভা নিয়ে আলোচনার জন্য কিছু কথা আছে বলে লুড়কা গ্রামের এক দলীয় কর্মী-সহ কয়েকজন শান্তিকে মোটরবাইকে চাপিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর অমৃতপালের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাকে ওরা বেধড়ক মারধর করে। বিবেকানন্দকেও মারধর করা হয়। এরপর বাইকবাহিনী নিয়ে কয়েকজন রাইপুরে এসে হামলা চালায়। কর্মাধ্যক্ষ পল্টু এবং যুব তৃণমূল কর্মী বাপ্পাকেও মারধর করেছে ওরা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অনিল মাহাতো ও রাজু সিংহের লোকেরাই পরিকল্পিত ভাবে এ দিন হামলা চালিয়েছে।” তিনি জানান, গোটা ঘটনাটি দলের জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছেন।

ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি তথা মেলেড়া পঞ্চায়েতের প্রধান রাজু সিংহ। রাজুবাবুর দাবি, “আমি দলের যুব সংগঠনের ব্লক সভাপতি। তা সত্ত্বেও শান্তিনাথ নিজেকে ব্লকের যুব সভাপতি দাবি করে ২১ জুলাইয়ের সভা সফল করার পোস্টার সাঁটিয়েছে, ফ্লেক্স দিয়েছেন। এতে দলের কর্মীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। শান্তিবাবু কেন এ সব করছেন তা জানার জন্যই দলের কিছু কর্মী তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন। তা নিয়ে ওই কর্মীদের সঙ্গে তাঁর বচসা হয় মাত্র। কিন্তু তাঁকে কেউ মারধর করেনি। আর পল্টু রাইপুরে বসে আমাদের সম্পর্কে নোংরা কথা বলায় তাঁকেও দলের কর্মীরা সামান্য ধাক্কাধাক্কি করেছেন মাত্র। মারধরের রাজনীতি আমি করি না।”

দিন কয়েক আগে খাতড়ার সুপুরে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট হয়। জখম হন কয়েকজন। ভাঙচুর হয় দুই গোষ্ঠীর কার্যালয়। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই খাতড়া মহকুমারই রাইপুরে এ দিনের ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। শাসকদলের খেয়োখেয়িতে সাতসকালে এই হামলার ঘটনায় রাইপুর ও মটগোদার ব্যবসায়ীমহলে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দলের দ্বন্দ্ব আপসে মিটিয়ে নেওয়ার বদলে যে ভাবে প্রকাশ্যে মারপিট হল তাতে তৃণমূলেরই মুখ পুড়ল। জগবন্ধুবাবু জানিয়েছেন, যারা এই হামলা চালিয়েছে তাদের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement