ছাত্রীদের করোনা পরীক্ষা ঝালদা ১ ব্লক অফিসের কন্যাশ্রী ভবনে। পিছনে আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র।
কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ বার পুরুলিয়ার কন্যাশ্রীদেরও শামিল করছে জেলা প্রশাসন। সেই ভাবনা থেকেই শুক্রবার কন্যাশ্রী দিবসে তাদের কোভিডের মোকাবিলার পাঠ দেওয়া শুরু হল জেলায়।
এ দিন ঝালদায় জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘পরিবারে মহিলাদের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে মা-বোনেরা সেবা করেন। তাই আমরা কন্যাশ্রীদের এই রোগের মোকাবিলার পাঠ দিচ্ছি। বলা যায়, এটা এখন অলিখিত সিলেবাস। মহিলাদের সচেতন করতে না পারলে আমরা কোভিড-যুদ্ধে হেরে যাব। তাই প্রশাসন চায়, এই লড়াইয়ে জেলার কন্যাশ্রীরাও নেতৃত্ব দিক।’’
এত দিন বাল্যবিবাহ রোধ, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই, নাগরিকদের প্রাপ্য সরকারি সুবিধার খবর মানুষজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া-সহ নানা কল্যাণমূলক কাজে কন্যাশ্রীদের সাহায্য নিয়েছে প্রশাসন। এ দিন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে গল্পের ঢঙে তাদের কাছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর, যিনি নিজেও ডাক্তার। ঝালদার কন্যাশ্রী ভবনে তিনি ছাত্রীদের জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে। অতিমারির সঙ্গে লড়াইয়ে সচেতনতাই সব থেকে বড় অস্ত্র। সবাইকে মিলিত ভাবে লড়তেই হবে।
আকাঙ্ক্ষাদেবী বলেন, ‘‘করোনা রুখতে গেলে ‘মাস্ক’ পরতে হবে, ঘনঘন হাত ধুতে হবে। ভিড়ে যাওয়া চলবে না।’’ সাবান দিয়ে হাত কী ভাবে, কতক্ষণ ধোয়া দরকার তা-ও তিনি জানান। কী ভাবে ‘পালস অক্সিমিটার’ দিয়ে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দেখতে হবে, অক্সিজেনের মাত্রা কত হলে বুঝতে হবে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার তা বোঝান। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলার মাঝেই ছাত্রীরা দাবি করে, কন্যাশ্রী ভবনে ‘পালস অক্সিমিটার’ নেই। তারা ‘পালস অক্সিমিটার’ চায়।
গতবার কন্যাশ্রী দিবসে জেলা প্রশাসনের স্লোগান ছিল— ‘আমার মেয়ে সব জানে’। অর্থাৎ, লেখাপড়া থেকে ক্যারাটে, চাষাবাদ থেকে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই— সব কিছুতে মেয়েরা এগিয়ে থাকবে। এ বারের স্লোগান— ‘কন্যাশ্রী বড়দি জানে, কোভিডেরও মানে’।
জেলাশাসক ছাত্রীদের বলেন, ‘‘এখনও জেলায় ৩৯ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আক্রান্তদের ১.৩৫ শতাংশ পুরুষ ও ১.০৫ শতাংশ মহিলা। বোঝাই যাচ্ছে, করোনা পুরুষ-মহিলা বিচার করে না। এই সঙ্কটে সবাইকে মিলিত ভাবে লড়তে হবে। আক্রান্তের লক্ষণ জানতে হবে, তিনি বাড়িতে থাকলে কী ধরনের সতর্কতা মেনে চলতে হবে— সব জানতে হবে। এই লড়াইতে তোমরাও পথ দেখাও।’’ তিনি জানান, এ দিন জেলার সমস্ত ব্লকের কন্যাশ্রী ভবনে পাঁচ শতাধিক কন্যাশ্রীর করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
জেলাশাসকের সঙ্গে শপথবাক্যে গলা মিলিয়ে মেরেন্দ হাইস্কুলের লক্ষ্মী কর্মকার, খামার হাইস্কুলের সীমা গোস্বামী, তুলিন তপোবন হাইস্কুলের পায়েল দে, সত্যভামা হাইস্কুলের বীণা কুমারেরা বলে, ‘‘এই লড়াইয়ে আমরাও শামিল হলাম।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)