জয়পুর রেঞ্জ অফিসের সামনে চলছে মহড়া। —নিজস্ব চিত্র।
গভীর জঙ্গল থেকে হাতি-হরিণ, সমুদ্র বাঁধ থেকে পরিযায়ী পাখি, গোকুলচাঁদ-জগতগৌরীর মতো পুরনো মন্দির— পর্যটক আকর্ষণের জন্যে কী নেই জয়পুরে? কিন্তু, তার কতটুকুর খোঁজ রাখেন উৎসাহীরা? সেই হালহদিশ, খুঁটিনাটি জানাতেই শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম বারের জয়পুর পর্যটন উৎসব।
উৎসব কমিটির সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা সোমবার বিডিও অফিসে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এ খবর জানান। তিনি জানাচ্ছেন, উৎসবের উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। চার দিনের মেলায় তুলে ধরা হবে এলাকার সাংস্কৃতিক ও পর্যটনের বৈচিত্র্যের কথা। তিনটি মঞ্চে হবে অনুষ্ঠান। বিভিন্ন দিনে যোগ দেবেন দেব, শ্রাবন্তী, রাহুল, প্রিয়ঙ্কা-সহ টলিউডের এক ঝাঁক শিল্পী। থাকবেন বাউল, কবিগান, লোকসঙ্গীত ও বিষ্ণুপুরী শাস্ত্রীয় সংগীতের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের সূচনার শোভাযাত্রায় দেখা যাবে আদিবাসী নাচ, রণপা ও লোকশিল্পের ট্যাবলো। মেলার বাজেট ধরা হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হবে ‘পর্যটনে জয়পুর’ নামে একটি গ্রন্থ। দ্বিতীয় দিনে ‘জয়পুরের সৌন্দর্যায়ন ও পর্যটন’ নিয়ে মেলা মঞ্চে থাকবে আলোচনা সভা। মেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি তথা জয়পুরের বিডিও ধ্রুবপদ শাণ্ডিল্য জানান, এলাকার পর্যটনের উন্নতিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। সমুদ্রবাঁধের পাড় সৌন্দার্যায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ওই বাঁধে বোট চালুর কথাও ভাবা হয়েছে। ওই বাঁধ ও জঙ্গল লাগোয়া ওয়াচ টাওয়ারের সংস্কারের কাজ চলছে। কয়েক’টি গাছের উপরে নতুন ওয়াচ টাওয়ার তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।
পঞ্চায়েত সমিতির ‘বনবিতান’ লজটিকেও আকর্ষণীয় ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এলাকার দর্শনীয় জায়গাগুলি চেনাতে তৈরি হচ্ছে ‘ট্যুরিজম ম্যাপ’। এ বিষয়ে কিছু গাইডকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। স্বল্প দূরত্বের জায়গাগুলি দেখানোর জন্য নামানো হবে টোটো। পর্যটকেরা যাতে রাতের বেলায় থাকতে পারেন, সে জন্যে বন দফতরের বাংলোর শয্যা সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন মেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি।
মন্ত্রী জানান, ট্যুরিস্টরা যাতে সরাসরি হরিণ ও ময়ূরদের দেখতে পান, সে জন্য একটি ডিয়ার পার্ক-এর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বন দফতরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবার্তা এগোচ্ছে। এলাকায় ইকো ট্যুরিজমের সঙ্গে ছড়ানো পুরাতাত্বিক নিদর্শনের মেলবন্ধন ঘটিয়ে আরও কী ভাবে জয়পুরের আকর্ষণ বাড়ানো যায় সেই নিয়ে নানা পরিকল্পনা চলছে জানান মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে থাকার জায়গার অভাব নেই। বেশ কয়েক’টি বেসরকারি লজ ও রিসর্ট গড়ে উঠেছে।’’ কিন্তু, ট্যুরিস্টদের টেনে আনার মতো আরও কিছু সুষ্ঠু পরিকল্পনা জরুরি সেটাও মনে করছেন মন্ত্রী। সেই লক্ষ্যেই এগোনো হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।
উদ্যোক্তাদের আশা, সেই লক্ষ্যপূরণের প্রথম ধাপটাই হতে চলেছে জয়পুর পর্যটন উৎসব।