ব্যান্ডেজ ভুল বাঁধার খেসারত দিয়ে গোটা পা-ই বাদ গিয়েছে এক সদ্যোজাতের। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আগেই সদর থানায় করেছেন ওই সদ্যোজাতের বাবা-মা। এ বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছেও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করলেন তাঁরা।
বুধবার অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাঁচ জনের একটি তদন্ত কমিটি গড়ে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান।
এ দিন অধ্যক্ষ বলেন, “অভিযোগ পেয়েই তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। কেন এমনটা ঘটলস তা দেখতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। ওই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে বলেছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। চিকিৎসায় গাফিলতি ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
৬ জানুয়ারি বাঁকুড়া মেডিক্যালে ছাতনার কেন্দ্রসায়র এলাকার বধূ কৌশল্যা মণ্ডল পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। জন্ম থেকেই ওই সদ্যোজাতের ডান পায়ের পাতা ছিল বাঁকা। এর চিকিৎসার জন্য ১৮ জানুয়ারি সদ্যোজাতকে নিয়ে তার পরিবারের লোকজন বাঁকুড়া মেডিক্যালের আউটডোরে যান। সেখানে অর্থোপেডিক বিভাগে ওই শিশুটিকে দেখানো হলে চিকিৎসকেরা তার পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন।
কৌশল্যাদের দাবি, ব্যান্ডেজ বাঁধার পর থেকেই শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করেছিল। এই অবস্থায় ২২ জানুয়ারি তার পায়ের ব্যান্ডেজ খোলাতে ফের হাসপাতালে যান মণ্ডল দম্পতি। সে দিন আউটডোর বন্ধ থাকায় তাকে জরুরি বিভাগে দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২৫ জানুয়ারি শিশুটির পায়ের ব্যান্ডেজ খুলতে গিয়ে দেখা যায় পায়ের চামড়ার সঙ্গে তা জুড়ে গিয়েছে। পর দিন শিশুটিকে কলকাতায় রেফার করে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে শিশুটির ডান পা হাঁটু থেকে কেটে বাদ দিতে হয়।
ঘটনাটি সামনে আসতেই অনেকে তাজ্জব হয়ে যান। ফের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠে আসে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই সদ্যোজাতের বাবা শান্তিময় মণ্ডল।
জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে শীঘ্রই রিপোর্ট চাইব আমরা।’’ শান্তিময়ের আক্ষেপ, “হাসপাতালের ডাক্তাররা সঠিক চিকিৎসা করলে আমার সন্তানের এই পরিণতি হতো না। যাঁদের গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের শাস্তি চাই।’’
মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিমবাবু জানান, সদ্যোজাতদের পায়ের পাতায় ওই ধরনের সমস্যা থাকলে পায়ের গঠন ঠিক করতে ব্যান্ডেজ বা প্লাস্টার করা হয়। তবে, এই শিশুটির ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম মেনে ব্যান্ডেজ করা হয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যান্ডেজ করার সময় আউটডোরের সিনিয়র চিকিৎসক নিজের ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করেছিলেন কিনা, তা-ও দেখবে তদন্তকারী কমিটি।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২২ জানুয়ারি থেকে তিন দিন ওই সদ্যোজাত হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি ছিল। কেন এর মাঝে ওই ব্যান্ডেজ খোলা হল না, সে প্রশ্ন ভাবাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালের যে সিনিয়র ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ওই সদ্যোজাত ভর্তি হয়েছিল, তাঁর ভূমিকা তাই খতিয়ে দেখা হবে বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন।