সাড়া: সাঁইথিয়া স্টেশনে ট্রেন আটকে চলছে অবরোধ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
আদিবাসী সংগঠনের রেল, পথ অবরোধে নাকাল হল বীরভূমও।
অলচিকি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ, সাঁওতালি ভাষার বই সরবরাহ সহ ছয় দফা দাবিতে সোমবার সকাল আটটা থেকে ভারত জাকাত মাঝি পারগানার বীরভূম জেলা শাখার পক্ষ থেকে সাঁইথিয়ার চৌরাস্তায় প্রায় ৪০ মিনিট বোলপুর-রাজগ্রাম এবং সাঁইথিয়া-লাভপুর সড়ক অবরোধ করা হয়। তার পরে সকাল ৯টা নাগাদ সাঁইথিয়া স্টেশনে অবরোধ হয়। আটকে পড়ে কবিগুরু, কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ বিভিন্ন ট্রেন। ঘণ্টা দু’য়েক ওই অবরোধ চলে। পুলিশ, প্রশাসনের মধ্যস্থতায় অবরোধ ওঠে।
অবরোধের জেরে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। ট্রেনে রামপুরহাট যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি বেরিয়ে স্টেশনে এসেছিলেন স্থানীয় নেতুরের অঞ্জলি দলুই। তিনি জানান, আদালতে মামলায় হাজিরার দিন ছিল। কিন্তু যাওয়া হয়নি। বর্ধমানে চোখের ডাক্তার দেখাতে যাবেন বলে ২০ কিমি বাসে চেপে ট্রেন ধরতে এসেছিলেন গিধিলার সাধন দাস। তিনি বলেন, ‘‘এক মাস আগে নাম লিখিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু, অবরোধের জেরে যাওয়া হল না। আবার একমাস অপেক্ষা করতে হবে।’’
বিক্ষোভকারীরা অবশ্য জানিয়েছেন, প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েও কোনও লাভ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে রেল অবরোধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মুখপাত্র বুদি মুর্মুর দাবি, এ রাজ্যে বাংলার পরেই বেশি ব্যবহৃত ভাষা আদিবাসী। বহু আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েছে। সরকার আদিবাসীদের জন্য আলাদা শিক্ষা বোর্ড চালু করার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। কিন্তু, তা কার্যকরী করেনি। বুদির কথায়, ‘‘আমাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই অবরোধের সিদ্ধান্ত।’’
সাঁওতালি এডুকেশন বোর্ড, অলচিকি হরফে ছাপানো বই এবং অলচিকি ভাষায় পড়ানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি, আদিবাসী প্রভাবিত এলাকায় আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ সহ একাধিক দাবিতে অবরোধ হয়। তাতে সাড়া মিলিছে মহম্মদবাজারেরও। দাবি না মানা হলে ‘অনির্দিষ্ট কালের রাস্তা অবরোধ’ কর্মসূচির জেরে এ দিন সকাল ১০ থেকে ব্লকের জয়পুর মোড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয় রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। আটকে পড়ে শয়ে শয়ে যানবাহন। দুর্ভোগে পড়লেন মানুষ।
বুদির মতোই সংগঠনের তরফে রামচন্দ্র মারডি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে বাংলার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা সাঁওতালি। গত ৫ সেপ্টেম্বর সাঁওতালি এডুকেশন বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। মানা হয়নি। ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও বর্ধমান সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ১২০০ এর বেশি আদিবাসী ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকে ভাল ফল করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু, সাঁওতালি ভাষায় পাঠ নেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে উঠছে না। এটাই চিন্তার। সেই দাবি আদায়ের জন্যেই এই কর্মসূচি।’’