—প্রতীকী ছবি
প্রকল্প শুরু হওয়ার পরে পার হয়ে গিয়েছে প্রায় তিনটি বছর। সামনের অর্থবর্ষ ২০২৪-২৫ মধ্যে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের (গ্রামীণ) দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা। অথচ এখনও পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলার অর্ধেকেরও বেশি গ্রামে প্রকাশ্যে শৌচ-মুক্ত (ওডিএফ) পরিবেশের পরিকাঠামোই গড়ে তুলতে পারেনি জেলা প্রশাসন। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে তারা তৎপরতা বাড়িয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরির কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষ থেকে স্বচ্ছ ভারত মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে কেবল বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরি করাই নয়, গ্রামের বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানেও শৌচাগার গড়া, প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকাঠামো গড়াকেও সংযুক্ত করা হয়।
বাড়ি ও কলতলার জল যাতে খোলা জায়গায় জমা না হয়, সে জন্য প্রয়োজনের ভিত্তিতে এলাকা ধরে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শোকপিট তৈরির কথা বলা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে বাড়ি বাড়ি জৈব ও অজৈব বর্জ্য পৃথক ভাবে সংগ্রহ করে তা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটে ফেলার কথা। ঠিক হয়, বাড়ি বাড়ি শৌচালয় ও গ্রামে গ্রামে কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকাঠামো গড়া হলেই গ্রামগুলি ‘ওডিএফ প্লাস’ তকমা পাবে।
কেন্দ্রের স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের ওয়েবসাইট থেকে সাম্প্রতিক তথ্যে জানা যাচ্ছে, বাঁকুড়া জেলার ৩,৫২৬টি গ্রামের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ১,২৯৭টি গ্রাম ‘ওডিএফ প্লাস’ তকমা পেয়েছে। প্রশাসনের একটি বিশেষ সূত্রে খবর, প্রকল্পের কাজের গতি শ্লথ হওয়ায় রাজ্য প্রশাসনের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।
তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে বদ্ধ পরিকর। প্রতিটি ব্লককে কাজের গতি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু এই প্রকল্প রূপায়ণে কাজের গতি শ্লথ হওয়ার পিছনে বিশেষ কারণ তুলে ধরছেন বিডিওদের একাংশ। এক বিডিও বলেন, “এক্ষেত্রে কেবল বাড়িতে শৌচালয় গড়ে দিলেই হবে না। কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট গড়তে হবে। কিন্তু সেই ইউনিট অধিকাংশ জায়গায় তৈরি করা যায়নি। আপাতত পরিত্যক্ত সরকারি ভবনগুলিতে জৈব ও অজৈব বর্জ্য পৃথকীকরণ করে রাখা হচ্ছে। পরে তা অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আশ্বাস, “চলতি অর্থবর্ষেই জেলার ১৯০টি পঞ্চায়েতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ইউনিট গড়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। যেখানে যেখানে নোংরা জল জমে, সেখানে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকাঠামো গড়া হবে।’’
এ দিকে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে তৈরি বহু শৌচাগারই নানা সমস্যায় ব্যবহারের অনুপোযুক্ত। কোথাও দরজা ভাঙা, কোথাও বসার জায়গায় সমস্যা রয়েছে। হাতি উপদ্রুত বেলিয়াতোড় রেঞ্জের ধুনাড়ার বধূ মমতা সুর বলেন, “বাড়ির শৌচাগারের দরজা ভাঙা। অন্য সময় মাঠে-ঘাটে গেলেও গ্রামে হাতি এলে তখন ওই ভাঙা শৌচাগারেই যাই। সরকার একটু যত্ন নিয়ে ব্যবহারের উপযোগী শৌচাগার তৈরি করতে দিতে পারল না!’’
বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানার কটাক্ষ, ‘‘এত বড় মাপের একটা প্রকল্প সঠিক ভাবে রূপায়ণ করতে প্রশাসনকে রাজনীতির গণ্ডি থেকে বেরিয়ে সব দলের জনপ্রতিনিধিদের মতামত নিতে হবে। কিন্তু এসব হচ্ছে না বলেই পরিকল্পনাতেই ফাঁক থাকছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনের প্রথম পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। দ্বিতীয় পর্যায়েও এমনটা হওয়ার আশঙ্কা করছি আমরা।’’
বাঁকুড়ার সভাধিপতি তৃণমূলের অনুসূয়া রায় অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ কোন পরিস্থিতিতে রয়েছে, খোঁজ নেব। সঠিক নিয়ম নীতি মেনেই এখানে প্রকল্প রূপায়ণ করা হয়।’’