প্রতীকী ছবি
দ্রুত ফুরিয়ে আসছে পুরবোর্ডের মেয়াদ। এই পরিস্থিতিতে বাঁকুড়ায় তিনটি পুরসভায় প্রশাসক হিসেবে বর্তমান পুরপ্রধানদেরই নিয়োগ করা হল। তবে পুরুলিয়ার তিনটি পুরসভায় এখনও তেমন কিছু হয়নি। ক্রমশ বাড়ছে জল্পনা।
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় মোট ছ’টি পুরসভা। প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ রবিবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুরসভার, সোমবার সোনামুখী পুরভার ও মঙ্গলবার বাঁকুড়া পুরসভার পুরবোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে চলেছে। তিনটি ক্ষেত্রেই পুরপ্রধানদের প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে উপ-পুরপ্রধানদের প্রশাসক বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে।
বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য পুর দফতর থেকে প্রশাসক-নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশিকা পেয়েছি। পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এই দায়িত্বে থেকেই কাউন্সিলরদের সাহায্য নিয়ে পুরসভার কাজকর্ম চালিয়ে যাব।” সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই রাজ্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পুরসভার কাজকর্মগুলি ব্যাহত হবে না।” বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, উপপুপ্রধান-সহ চার জন বোর্ডে রয়েছেন।’’
তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের প্রধানদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়ায় প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “প্রশাসনিক আধিকারিকদের বদলে দলীয় লোকজনকে ক্ষমতায় বসিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে তৃণমূল।” বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “পুরসভার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার স্বার্থেই এটা করছে তৃণমূল। প্রশাসক বসলে, বিরোধীদের কোনও ভূমিকাই থাকবে না।” বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি শুভাশিস বটব্যালের বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে অবশ্য বলছেন, “পরিষেবা যাতে থমকে না যায়, সেই লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।”
পুরুলিয়া জেলায় তিনটি পুরসভা— পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর ও ঝালদা। শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত তিন দিন ছুটি পুরসভায়। খোলার দু’দিন পরেই, ২৭ মে তিনটি বোর্ডের মেয়াদ শেষ হবে বলে জানা গিয়েছে। তার পরে কী হয়, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
কলকাতা ও শিলিগুড়ি কর্পোরেশনে দুই মেয়রকেই প্রশাসক পদে বসানো হয়্ছে। পূর্ব বর্ধমানের একাধিক পুরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সেখানেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরপ্রধানদেরই। একই নজির দেখা গিয়েছে বাঁকুড়ার ক্ষেত্রেও। পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর ও ঝালদার বেলায় কী হয়, সেই নিয়েই এখন চলছে জল্পনা। তিনটি বোর্ডই এখন তৃণমূলের দখলে রয়েছে। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান ও রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান মদন বরাট বলেন, ‘‘প্রশাসক পদে কে বসবেন, সেটা পুরোপুরি রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত।”
গত পুরভোটে জেলার তিনটি পুরসভার মধ্যে পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুরের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। ঝালদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। কিন্তু পরে, কংগ্রেসের বেশির ভাগ কাউন্সিলর তাদের দলে যোগ দেওয়ায় ঝালদায় বোর্ড গড়ে তৃণমূল। ঝালদার পুরপ্রধান তৃণমূলের প্রদীপ কর্মকার বলছেন, ‘‘শুনেছি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে বিদায়ী পুরপ্রধানদেরই প্রশাসক পদে বসান হচ্ছে। ঝালদায় প্রশাসকের দায়িত্ব পেলে, আরও ভাল ভাবে কাজ করার চেষ্টা করব।”
তৃণমূলের পুরুলিয়ার এক জেলা স্তরের নেতার কথায়, ‘‘করোনা-পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের আধিকারিকদের অনেক বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় প্রশাসনের আধিকারিকদের পুরসভাগুলির পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলে, তাঁদের পক্ষে কাজ করাটা অনেকটাই সমস্যার হতে পারে। এই ভাবনা থেকে পুরপ্রধানদের প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের অন্য পুরসভাগুলির মতো পুরুলিয়াতেও একই ঘটনা ঘটার সম্ভবনা বেশি।”
তবে রঘুনাথপুরের সিপিএম নেতা লোকনাথ হালদার বলেন, ‘‘পুরপ্রধানকেই যদি প্রশাসক নিয়োগ করা হয়, তা হলে আমরা চাই, পুরসভায় আমাদের দলনেতাকে প্রশাসক বোর্ডের সদস্য করা হোক।’’
পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের সরকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের দখলে থাকা বোর্ডগুলিতে পুরপ্রধানদের প্রশাসক করছে। আর বিরোধীদের হাতে থাকা পুরসভায় পরিচালন কমিটি গড়ে সেখানে নিজেদের দলের কাউন্সিলরদের রেখে দিচ্ছে।” ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কাঁদুর বক্তব্য, ‘‘পুরসভার মেয়াদ শেষে প্রশাসনের কোনও পদস্থ আধিকারিককেই দায়িত্ব দেওয়াটা বাঞ্ছনীয়।’’