পাশে নোটিস। এই রাস্তা ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
শাসকদলের ভ্রূকুটি। শেষমেশ পিছিয়েই গেল প্রশাসন!
অন্তত এমনটাই অভিযোগ উঠছে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সম্প্রসারণকে ঘিরে। ঘটনা হল, ওই রাস্তা তৈরিতে প্রধান বাধা ছিল গুটি কয়েক অবৈধ নির্মাণ। বারবার নোটিস দিয়েও কাজ হয়নি। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে মঙ্গলবারই ওই সব অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে প্রশাসন সাময়িক ভাবে পিছিয়ে যাওয়ায় রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রেই প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলে গেল। অথচ সামনেই বর্ষা। একবার বর্ষা শুরু হয়ে গেলে দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার আর ওই কাজ শেষ করতে পারবেন কিনা সংশয়ে পূর্ত (সড়ক) বিভাগও। বাসিন্দারা অবশ্য এর পিছনে শাসকদল তৃণমূলের অনৈতিক হস্তক্ষেপকেই দেখছেন।
প্রসঙ্গত, এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে হেতমপুরে গ্রামের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে রাস্তা নতুন করে তৈরি ও প্রশস্ত করার কাজ। মাত্র কয়েকটি দোকান ও বাড়ির কারণে আটকে গিয়েছে রাস্তা তৈরির কাজ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই সব অবৈধ নির্মাণের তালিকায় খোদ হেতমপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান নীলোৎপল মুখোপাধ্যায়ের বাড়িটিও রয়েছে। সেটাই সম্ভবত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করার পথে প্রধান বাধা! মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) অরুন্ধতী ভৌমিক অবশ্য বলেই দিচ্ছেন, ‘‘গত ২৮ মে অবৈধ নির্মাণ সরানোর শেষ দিন ছিল। মঙ্গলবারই রাস্তা দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানোর কথা ছিল। কিন্তু, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সিদ্ধান্ত দিন দুই স্থগিত রাখা হল। তবে, সিদ্ধান্ত কার্যকর হবেই।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, দুবরাজপুর শহরের যানজট সমস্যা এড়াতে এবং হেতমপুরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে গত ডিসেম্বরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি রাস্তার কাজে হাত দেয় পূর্ত দফতর (সড়ক)। বরাদ্দ খরচ প্রায় আড়াই কোটি টাকা। প্রথম রাস্তাটি দুবরাজপুরের কামারশাল মোড় থেকে হেতমপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে গিয়ে পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কে গিয়ে মিশছে। দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। নাম ‘ফিডার রোড’। হেতমপুর রাজবাড়ির একটু আগেই ওই রাস্তা থেকে আরও একটি ১.২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরি হচ্ছে। যেটি দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরীর কাছে উঠবে। ওই রাস্তা হল ‘লিঙ্ক রোড’। দু’টি রাস্তাই ১৮ ফুট চওড়া হওয়ার কথা। সমস্যার সূত্রপাত এখান থেকেই। রাস্তার একটা বড় অংশ নির্বিঘ্নে শেষ করা গেলেও ফিডার রোডের একটা বড় অংশ— হেতমপুরের প্রতীচী পল্লি থেকে ডাঙালপাড়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার কাজ বাকি থেকে গিয়েছে। রাস্তা ১৮ ফুট চওড়া করতে হলে ওই এলাকার কমবেশি পনেরোটি বাড়ি ও দোকান ভাঙা পড়বে। সেটা করতে গিয়েই সমস্যা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, রাস্তা যখন হচ্ছে তখন সব জায়গায় নির্দিষ্ট মাপ এবং নিয়ম মেনেই হোক। অন্য দিকে যাঁদের বাড়ি বা দোকান ভাঙা পড়ছে, তাঁদের কয়েক জনের আপত্তি রয়েছে। শাসকদলের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে পূর্ত দফতর পাছে পিছিয়ে আসে, এই আশঙ্কায় একাধিকবার এলাকার বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, অবৈধ নির্মাণ না ভাঙলে রাস্তার কাজ করতে দেবেন না তাঁরা। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর অবৈধ নির্মাণগুলিকে চিহ্নিত করার পরে তা সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানিয়ে দু’-দু’বার নোটিস জারি করেছিল পূর্ত এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। তাতেও কাজ হয়নি। ফের একই দাবিতে প্রশাসনের বিভিন্ন ধাপে স্মারকলিপি দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত ২১ মে মহকুমাশাসক ফের অবৈধ নির্মাণ না সরালে তা ভেঙে ফেলার নোটিস জারি করেন। কিন্তু, কাজ হয়নি তাতেও। রাস্তার ধারে থাকা দু’ চার জন এলাকাবাসী দাবি মেনে নিজেদের অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে শুরু করলেও উপপ্রধান-সহ বেশ কয়েকটি বাড়ি বা দোকানের মালিক নোটিসে ভ্রুক্ষেপ করেননি। স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘শাসকদলের উপপ্রধান হওয়ায় তিনি প্রভাব খাটাচ্ছেন। তার জন্যই প্রশাসন এখনও তার দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এতে ভুগতে হবে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই। তবে রাস্তা হলে ১৮ ফুট চওড়া না করলে রাস্তার কাজে হাত লাগাতে দেওয়া হবে না।’’
যদিও এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি উপপ্রধান নীলোৎপল মুখোপাধ্যা। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাস্তা বা দখলদারি নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’ তিনি কথা না বললেও রাস্তা দখল করে থাকা উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ ভাণ্ডারী, প্রসাদ আচার্যরা বলছেন, ‘‘আমরা অন্যায় ভাবেই রাস্তা দখল করেছিলাম। আমরা নিজেরাই সেই অংশ ভেঙে দিচ্ছি। কষ্ট যে হচ্ছে না, তা নয়। তবে চাই সকলের স্বার্থেই রাস্তা হোক।’’ অন্য দিকে, ঠিকাদার সংস্থা সময়ে কাজ না করতে পারলে কাজ আদৌ শেষ হবে কিনা সংশয়ে পূর্ত দফতরের আধিকারিরেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ ভাবে সময় অপচয় হতে হতে যদি বর্ষা এসে যায়, তখন সত্যিই কাজ করতে সমস্যা হবে। তখন তো ঠিকাদারের উপর চাপানো যাবে না। তাই তিনি যদি কাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যান, তা হলে চরম সমস্যা হবে।’’