অনুব্রত মণ্ডলের অভাব ভোগাতে পারে শাসক দলকে। — ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটে তিনি বলেছিলেন ‘খেলা হবে’। পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য এ বার শাসক দলের হয়ে ‘খেলা’ দেখানোর সেই নেতা, জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলই অনুপস্থিত! তিনি এখন তিহাড় জেলে বন্দি। অনুব্রত তথা কেষ্ট ছাড়া বীরভূমে তৃণমূল ভোটে যাচ্ছে, এমন আগে হয়নি। এতে এক দিকে যেমন বেশ কিছুটা হতাশ শাসক দলের নেতা কর্মীরা, তেমনই চাঙ্গা বিরোধীরা।
শাসক দলের নেতা কর্মীরা মনে করছেন, ভোটের আগে ‘কেষ্টদা’র একটা নির্দেশই যথেষ্ট ছিল। অন্য দিকে, কেষ্টর নির্দেশেই ভয় দেখিয়ে, সন্ত্রাস করে তাদের মনোনয় করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। মনোনয়ন ঘিরে বোমাবাজি, রক্তপাত, খুন দেখেছে জেলা। এ বার বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক-বিরোধীরা কে কোন থাকবে তা নিয়েও চর্চা চলছে।
কেষ্টহীন বীরভূমে এই মূহূর্তে তৃণমূলের ৯ সদস্যের কোর কমিটি রয়েছে। বীরভূমে সংগঠন দেখার দায়িত্ব নিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোর কমিটি ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাঝে রয়েছেন তিন নেতা। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁদের কাজ কোর কমিটিকে সাহায্য করা এবং সমন্বয় সাধন। তবুও কেষ্টর না থাকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করছেন দলের কর্মীদের একাংশ। তা সত্ত্বেও বিরোধীদের থেকে শাসক দল অনেকটাই এগিয়ে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। বিশেষ করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বেশি না থাকায় শাসক দল ছাড়া খসড়া প্রার্থী তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিরোধীরা বেশ খানিকটা পিছিয়ে বলে একান্তে স্বীকারও করছেন বিরোধী দলের নেতারা।
পঞ্চায়েত, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে অনুব্রতের মুখে শোনা গিয়েছে ‘গুড়-বাতাসা’, ‘নকুলদানা’, ‘চড়াম- চড়াম’ বা ঠেঙিয়ে ‘পগার পার’-এর মতো শব্দবন্ধ। জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নেতা, কর্মীদের মুখে মুখে ফিরেছে ওই সব শব্দবন্ধ। ময়ূরেশ্বরের ঢেকা পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল কর্মী প্লাবন মণ্ডল, নানুরের থুপসড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মীরমাখন আলি বলেন, ‘‘প্রতিটি নির্বাচনের আগে কেষ্টদা একটা নিত্যনতুন শব্দবন্ধ বলতেন। সেগুলি কর্মী, সমর্থকদের মনের মধ্যে এক ধরনের অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করত। এ বারে নতুন কোনও শব্দবন্ধ মেলেনি।’’ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘অনুব্রতকে মণ্ডলকে আর নতুন কোনও শব্দবন্ধ বলতে হবে না। জেলের থাকতে থাকতে পুরনো শব্দগুলিই ভুলে যাবেন।’’
তবে কয়েক মাস ধরেই পঞ্চায়েত ভোটের জন্য তৈরি হচ্ছে তৃণমূল। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার— ছ’দিন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়ে ব্লক ভিত্তিক পর্যালোচনা ছিল বোলপুর জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে। ইতিমধ্যেই জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা শেষ। আজ, শুক্রবারের মধ্যে দলের ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি বিধায়কদের সই করা তালিকা জেলায় পৌঁছে যাবে। যে সব আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম রয়েছে, সেখানে যাতে সমীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় সে জন্য প্রতি প্রার্থীর নামের সঙ্গে ফোন নম্বর ও ঠিকানা নেওয়া হয়েছে।
সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে অলিখিত আসন সমঝোতা হলেও কোন আসনে কে প্রার্থী দেবে সেটা ঠিক হয়নি বলে দুই বিরোধী দল সূত্রে জানা গিয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘কোন আসনে কারা লড়বে সেটা মোটামুটি ঠিক হয়েছে। তবে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়নি।’’ বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘কে কোথায় প্রার্থী হতে পারেন তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিক করা রয়েছে। চূড়ান্ত করতে দিন কয়েক লাগবে।’’ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আজ নির্বাচনে হলে আজই ভোটে যেতে পারে দল। সেই জন্য বহু আগে থেকে প্রস্তুতি চলছে। সারাক্ষণ আমরা মানুষের পাশে থাকি।বিরোধীদের মতো ভোটমুখী ভাবনায় বিশ্বাসী নই।’’ বিরোধীদের কটাক্ষ, স্রেফ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাক শাসক দল। তাহলেই বোঝা যাবে।