শৌচাগার নেই। তাই, সকাল হোক বা রাত ছাত্রাবাসের আবাসিক পড়ুয়াদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য একমাত্র জায়গা ছিল-খোলা মাঠ।
১৯৫৬ সালে তপসিলি জাতি উপজাতিদের জন্য প্রতিষ্ঠাত সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী গ্রামের সুধাংশুবদনী শিক্ষানিকেতন লাগোয়া কৃষ্ণদাস ছাত্রাবাসের আবাসিক ৮১ জন পড়ুয়ার বর্ষ প্রাচীন দুর্দশার ছবিটাই এ বার বদলে যেতে চলেছে। জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্লানে বরাদ্দ মোট ১৩ লক্ষ টাকা দিয়েই হতে চলছে একগুচ্ছ শৌচাগার, ইউরিনাল ও পানীয় জলের ব্যবস্থা। সিউড়ি ১ ব্লকের বিডিও মহম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই বরাদ্দ টাকা প্রধান শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে সাব অ্যালোট করে দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের সমস্যা মিটল বলে।’’
প্রায় একই বক্তব্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শীর্ষেন্দু রায় চৌধুরীরও। তিনি বলছেন, ‘‘এ বার হাঁফ ছেড়ে বাচবে ওরা।’’
সত্যিই তাই। আসলে তপসিলি জাতি উপজাতিভূক্ত ছাত্রদের জন্য নির্মিত একষট্টি বছর আগের ওই ছাত্রাবাস প্রথমদিকে শৌচাগার থাকলেও বহুবছর ধরেই সেগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
একপ্রকার বাধ্য হয়ে বছরের পর বছর শীত গ্রীষ্ম বর্ষা উপেক্ষা করে ছাত্রাবাস থেকে বেশ কিছুটা দূরের কোনও পুকুরে বা খোলা মাঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেত হয় পড়ুয়াদের। পড়ুয়াদের কথায়, সমস্যা ছিলই। তার উপর যদি কোনও ছাত্র পেটের রোগে আক্রান্ত হয় তখন কষ্ট দ্বিগুন বেড়ে যায়। এখন সমস্যা মেটার অপেক্ষায় দ্বাদশ শ্রেণির বাসুদেব হেমব্রম, একাদশ শ্রেণির শিবধন সরেন, দশম শ্রেণির শৌভিক সাহা, অষ্টম বাউরিরা। তারা বলছে, ‘‘কবে সুদিন আসবে অপেক্ষায় রয়েছি। শুনছি টাকার সমস্থান হয়েছে। এ বার মিটতে পারে আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি।’’
স্কুল সূত্রের খবর যদিও শৌচাগারের জন্য টাকা বরাদ্দ এত সহজে হয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে স্কুলের শিক্ষকদের মিলিত প্রচেষ্টা ছিল। স্বচ্ছ ভারত মিশন বা মিশন নির্মল বাংলা নিয়ে যখন এত কথা হচ্ছে তখন কেন স্কুল লাগোয়া পড়ুয়াদের এমন সমস্যা থাকবে প্রশ্ন তুলে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর এবং ব্লক প্রশাসনের কাছে বারবার দরবার করেছেন শিক্ষকেরা।
তারপরই প্রশাসনের কাছে মৌখিক আশ্বাস মিললেও কাজ এগোচ্ছিল না। গত ১৫ সালের ডিসেম্বরে এই বিষয়ক একটি প্রতিবেদন আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রাকাশিত হওয়ার পরেই প্রশাসনিক মহলে নড়াচড়া বাড়ে। স্কুলের কাছ থেকে চাওয়া হয় ডিপিআর। চলতি বছরের গোড়ায় জঙ্গলমহল থেকে টাকা বারাদ্দ হচ্ছে উক্ত কাজে— এ কথা জানানো হয় স্কুলকে।
প্রধান শিক্ষক শীর্ষেন্দুবাবু জানিয়েছেন, মোট ১২টি শৌচাগার, ১০টি ইউরিনাল ও সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে পড়ুয়াদের পানীয় জলের অসুবিধা দূর করার বিষয়টি হিসাবের মধ্যে রয়েছে। দরপত্র ডাকার কাজ চলছে। বাকি কাজও দ্রুততার সঙ্গে হবে আশা করি।