জগদ্ধাত্রী প্রতিমা। —ফাইল চিত্র।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে অনেক সময় সভা করতে পুলিশ অনুমতি দেয় না বলে অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের। এমন অনেক ক্ষেত্রেই হাই কোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে শুভেন্দু সভা করেছেন। এ বার পুরুলিয়া শহরের একটি জগদ্ধাত্রী পুজো, যেখানে ফি বছর শুভেন্দু উদ্বোধনে আসেন, সেখানেও পুজোর অনুমতি না দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তবে, শেষ পর্যন্ত হাই কোর্ট ওই মন্দিরে পুজোর অনুমতি দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
মামলাকারীদের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী জানান, বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত পুজোর অনুমতি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছেন। পুজোর অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের মর্জিমাফিক আচরণ নিয়েও এ দিন আদালতে কথা উঠেছে। কংগ্রেস থেকে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়া কৌস্তভের অভিযোগ, ‘‘বিজেপির এক জেলা স্তরের নেতা পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এর আগে উদ্বোধন করায় এ বার অনুমতি দিতে চাইছিল না পুলিশ।’’ তিনি জানান, মঙ্গলবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে মামলার শুনানি ছিল। সে সময় মন্দির কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর আচরণ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বিচারপতি ঘোষ মামলাটি শুনানির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। জেলা পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পুরুলিয়ার মহকুমাশাসক উৎপলকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’
বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি গৌতম রায় পুরুলিয়ার নামোপাড়ার সরকারপাড়া সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা। শুভেন্দু অনুগামী গৌতম একসময় জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি ছিলেন। তৃণমূলে থাকাকালীনই তিনি জগদ্ধাত্রী পুজো করে আসছেন। সেই সময় থেকে এই পুজোর উদ্বোধন করছেন শুভেন্দু। আগে ওই পুজোয় তৃণমূলের অনেকে যুক্ত থাকলেও এখন তাঁরা সরে গিয়েছেন। পুজো আয়োজন করে ‘পুরুলিয়া জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি’। যদিও তা গৌতমের পুজো বলেই পরিচিত।
গৌতম জানান, দীর্ঘদিন তাঁরা ওই মন্দিরে পুজো করে আসছেন। কোনও সমস্যা হয়নি। পুরসভা ও দমকল পুজোর অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু মন্দির কমিটির আপত্তিতে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁর দাবি, ‘‘যে জমির উপরে মন্দির রয়েছে তার মালিকানা এখনও আমাদেরই রয়েছে। হলফনামা দিয়ে আমরা তা আদালতকে জানিয়েছি। আমি মন্দির কমিটির সদস্যও বটে। অতীতে এই পুজো আমাদের পারিবারিক থাকলেও, পরে সর্বজনীন হয়েছে। কিন্তু এ বার তৃণমূলের এক প্রভাবশালী পুর-প্রতিনিধির উস্কানিতে মন্দির কমিটি পুজোয় আপত্তি জানিয়ে প্রশাসনকে চিঠি দেয়।’’ গৌতম রায়ের পক্ষে মামলার অন্যতম আইনজীবী শুভদীপ পরামাণিক বলেন, ‘‘বিভিন্ন দফতরের সবুজ সঙ্কেত থাকা সত্ত্বেও মন্দির কমিটির আপত্তির বিষয়টিকে অজুহাত করে যে পুজোর অনুমতি আটকানো হচ্ছে, আদালতও উপলব্ধি করেছে।’’
উস্কানির অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। স্থানীয় তৃণমূল পুর-প্রতিনিধি বৈদ্যনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারপাড়া সর্বজনীন দুর্গামন্দির কমিটিই পুজো নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বলে জানি।’’ ওই দুর্গামন্দির কমিটির সম্পাদক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্য পুজো কমিটি আমাদের মন্দিরে জগদ্ধাত্রী পুজো করে। মন্দির কমিটি চেয়েছিল, ওই কমিটি তাদের কাছে লিখিত ভাবে অনুমতি নিয়ে পুজোটা করুক। কিন্তু ওরা তা করতে চায়নি। পুজো নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। আপত্তি পুজো সংগঠনের পদ্ধতি নিয়ে। আমরা আদালতের রায় মেনে চলব। তবে আগামী বছর আমাদের মন্দির কমিটিই জগদ্ধাত্রী পুজো করবে।’’