শিল্প নিদর্শনের ক্ষতির আশঙ্কা

খুলেছে লালপুল, তবু আশ্রম দিয়ে যাচ্ছে ভারী যান

সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের উপর লালপুল সম্প্রসারণের কাজ চলছিল। সেই কারণে শান্তিনিকেতনের মধ্য দিয়ে যান চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২৬
Share:

শান্তিনিকেতন রাস্তায় চলছে ভারী যান। —নিজস্ব চিত্র

সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের উপর লালপুল সম্প্রসারণের কাজ চলছিল। সেই কারণে শান্তিনিকেতনের মধ্য দিয়ে যান চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। প্রায় তিন মাস সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। তবু শান্তিনিকেতন আশ্রম এলাকার ভিতর দিয়ে ভারী যান চলাচল কমেনি! এতে উদ্বিগ্ন বিশ্বভারতী। আশ্রম এলাকার মধ্য দিয়ে ভারী এবং মালবাহী যান চলাচলের জেরে পড়ুয়াদের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অভিভাবক এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে এমন যান চলাচলের কারণে, আশ্রম এলাকায় ছড়িয়ে থাকা দুর্মূল্য শিল্প সামগ্রীও নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে শিল্পী-বিশেষজ্ঞ মহলে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভিতর দিয়ে সমস্ত রকমের যান-জট নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement

বোলপুরের সংকীর্ণ রেলসেতু লালপুল সম্প্রসারণের জন্য রুটের যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে ভারী নানা যান বোলপুরের লজ মোড় থেকে শান্তিনিকেতন রোড হয়ে শ্যামবাটি সেচ সেতুর রাস্তায় এতদিন চলাচল করত। পুজোর ছুটির পরে পড়ুয়ারা ফিরছেন প্রতিষ্ঠানে। অন্যতম ব্যস্ত ওই রাস্তার ধারে রয়েছে খুদে পড়ুয়াদের আনন্দ পাঠাশালা। একটু এগিয়েই ডাক ঘর মোড়ের অদূরে উপাসনা গৃহ। ডাকঘর মোড় থেকে শ্যামবাটি সেচ সেতুর ধারে রয়েছে উত্তরায়ণ চত্বর। সেখানে রয়েছে মাটির বাড়ি শ্যামলী। একই রাস্তার ওপর এবং সংলগ্ন আশেপাশের রাস্তা ও এলাকায় কার্যত পায়ে পায়ে রয়েছে শিল্পীদের দুর্মূল্য শিল্পসামগ্রী। এমন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে যানবাহন যেমন চলছে। কেবল দূষণ নয়, বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না— এমন বলছেন শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারা।

বিশ্বভারতী এবং জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালামের নির্দেশে বিশ্বভারতীর সামগ্রিক বিকাশের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন হয়। প্রতিষ্ঠানের হৃত গৌরব ফেরাতে আশ্রমিক চরিত্র অক্ষুণ্ণ রেখে নিরাপত্তা, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে সুপারিশ করে ওই কমিটি। যেখানে ওই রাস্তায় ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা ছিল বিশ্বভারতী এবং সংশ্লিষ্ট স্তরে ওই বিশেষ কমিটির সুপারিশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

ওই সুপারিশ মেনে, সংশ্লিষ্ট স্তরে লিখিত আর্জি জানায় বিশ্বভারতী। ওই রাস্তা এবং সংলগ্ন রাস্তায় স্পিড ব্রেকার এবং জেব্রা ক্রসিং করার আর্জি জানিয়ে ২০০৮ সালের ২২ মার্চ বোলপুর মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৎকালীন বিশ্বভারতীর সম্পত্তি আধিকারিক অশোক মাহাতো। খুদে পড়ুয়া, দেশি, বিদেশী পর্যটক এবং বিশ্বভারতীর কর্মী, অধ্যাপক ও আশ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে, ওই বছর ১৮ জুলাই জেলাশাসক তপন কুমার সোম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি নির্দেশ দেন। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তাতে কিছুটা যানজট মিটলেও লালপুল সংস্কারের সময় ফের সমস্যা বাড়ে। বিকল্প রাস্তা হিসেবে, শহরের মধ্যে যানজট এড়াতে রুটের বাস থেকে শুরু করে সমস্ত যানবাহন শান্তিনিকেতন রাস্তার ওপর দিয়ে ঘোরানো হয়। কিন্তু লালপুল খোলার পরেও বড় সংখ্যার যানবাহন শান্তিনিকেতনের ভিতরের রাস্তাটিই ব্যবহার করছে। এতেই উদ্বিগ্ন বিশ্বভারতী।

বিশ্বভারতীর কলাভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা শিল্পী শিশির সাহানা বলেন, “ভারী যান চলাচলের ক্ষেত্রে শিল্প সামগ্রীর ক্ষয়ক্ষতি তো হচ্ছেই। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে শিল্পীদের শিল্প কর্ম নষ্ট না হয়।” বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্ত বলেন, “রবিবার রাত থেকে উপাসনা মন্দিরের সামনের রাস্তার ওপর ভারী যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আনন্দ পাঠশালার সামনে দিয়ে পূর্ত দফতরের ওই রাস্তায় যান চলাচলের সমস্যা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement