সন্টু মল্লিক।
মাস দশেক আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। থাকতেন লজে। শুক্রবার দুপরে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের সেই লজের দরজা ভেঙে নিতুড়িয়া চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সন্টু মল্লিকের (৩০) গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সন্টুর বাড়ি ঝাড়গ্রামের বিনপুর থানার হাড়দা গ্রামে।
এ দিন থানায় দেহের সুরতহাল করেন রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুদেষ্ণা দে মৈত্র। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের এক কর্তা ও সুদেষ্ণাদেবী দু’জনেই জানান, ওই ঘরের বিছানা থেকে সন্টুর সই করা একটি ‘সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। তাতে তিনি তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে লিখেছেন। ২ অগস্ট তারিখ উল্লেখ করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে, তাঁদের ধারণা, অন্ত ২৪ ঘণ্টা আগে সন্টু আত্মহত্যা করেছেন। তবে তার কারণ এ দিন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। মৃতের পরিবারের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর পরিজনেরা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত কোনও কারণে তিনি অবসাদে ভুগছিলেন।
কর্মক্ষেত্রে সন্টুর কোনও সমস্যায় ছিল না বলে জানিয়েছেন তাঁর পরিচিত শিক্ষকেরা ও পুরুলিয়ার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) অলক মহাপাত্র। ডিআই বলেন, ‘‘সন্টু যত্ন নিয়েই কাজ করতেন। গত মাসেই কলকাতায় প্রায় এক মাসের একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরেন। তিনি কাজের চাপে ভুগছিলেন বলে আমরা শুনিনি। কর্মস্থলে সমস্যা হলে নিশ্চয় আভাস পাওয়া যেত।’’
রঘুনাথপুর শহরের নতুন বাজার এলাকার ওই লজের মালিক সুব্রত ভকত জানান, দোতলায় ‘সিঙ্গল রুম’ ভাড়া নিয়ে গত ছয়-সাত মাস ধরে থাকছিলেন সন্টু। লজে তিনি বিশেষ কারও সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। অফিস থেকে ফিরে ঘর বন্ধ করে বেশির ভাগ সময় কাটাতেন। সামান্য গল্পগুজব অবশ্য হতো। তখনই তিনি জানিয়েছিলেন, অফিসের সময়টা বাদ দিয়ে বাকি সময় ঘরে পড়াশোনা নিয়ে থাকেন।
লজের মালিকের দাবি, ‘‘এক দিন গল্প করার সময়ে সন্টু জানিয়েছিলেন, তিনি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। শীঘ্রই এই কাজ ছেড়ে সেখানে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। তার মধ্যে কী যে হয়ে গেল!’’
দেহ দেখে ও সুইসাইড নোটের তারিখের উল্লেখ দেখে পুলিশের ধারণা, এক দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে নিতুড়িয়া চক্রের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসেছিলেন থানায়।
তাঁরা জানান, ১ অগস্ট অফিসে গিয়েছিলেন সন্টু। কিন্তু পরের দিন বৃহস্পতিবার থেকে তিনি অফিসে আর যাননি।
তাহলে লজ কর্তৃপক্ষের জানতে দেরি হল কেন?
লজের মালিক জানান, সন্টু বাইরে খেতেন। কারও সঙ্গে মেলামেশা করতেন না বলে কখন তিনি ঘরে ঢুকতেন, বেরোতেন সে ভাবে কেউ নজর রাখতেন না। যে দিন প্রয়োজন মনে করতেন, ঝাড়ুদারকে ডেকে ঘর পরিষ্কার করাতেন। এ দিন ঝাড়ুদার নিজেই বেলা ১০টায় সাফাই করতে গিয়ে দেখেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ডাকাডাকির পরেও দরজা না খোলায় অন্যেরাও হাঁকডাক করেন। সাড়া না পাওয়ায় শেষে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। বেলা দেড়টা নাগাদ রঘুনাথপুর থানার পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখেন ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল তাঁর দেহ। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুদেষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘সন্টুর দেহের বাইরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।’’
ডিআই বলেন, ‘‘এ দিনই অফিসের কাজে সন্টুকে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, ফোন ধরেননি। তারপরেই ওই মর্মান্তিক খবর আসে। খুব খারাপ লাগছে।’’ তিনি জানান, সন্টু পিএসসি বা কলেজের চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন বলে তাঁরা শুনেছিলেন। তারই মধ্যে এই খবরে তাঁরা মর্মাহত।
সন্টুর পরিজনেরা জানিয়েছেন, হাড়দায় গত শনিবার তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। সোমবার পুরুলিয়ায় ফিরে যান। সন্টুর বাবা খড়্গপুরে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। সন্টুর ভাই সৈকত পুলিশের কনস্টেবল। সন্টুর মা অসুস্থ বলে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁকে দুঃসংবাদ দেওয়া হয়নি। জানানো হয়েছে সন্টু অসুস্থ।
তাঁদের ধারণা, ব্যক্তিগত কোনও সমস্যায় সন্টু অবসাদে ভুগছিলেন। তবে বাইরে তার প্রকাশ সে ভাবে ছিল না। এলাকার মেধাবী ছেলের এই মৃত্যুতে এলাকায় শোক নেমে আসে।