বিতর্কে বাঁকুড়া মেডিক্যাল
Bankura

আক্রান্তের দেহ কেন পরিবারকে

মেডিক্যাল সূত্রে খবর, মেডিসিন বিভাগে কিছু দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের এক বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

বাঁকুড়া ও রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:০৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

মৃতের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার আগেই পরিবারের হাতে দেহ তুলে দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে ওই রোগীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসতেই হইচই শুরু হয়। গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে বাঁকুড়ার মেডিক্যালের আধিকারিকেরা। কোথায় গাফিলতি হয়েছে, তা জানতে কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু করেছেন মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

মেডিক্যাল সূত্রে খবর, মেডিসিন বিভাগে কিছু দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের এক বাসিন্দা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। রাতে মৃতের পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়। বুধবার সকালে ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে।

বাঁকুড়া মেডিক্যালের সুপার তরুণ পাঠক বলেন, “আমি বাইরে রয়েছি। ঘটনাটি ভারপ্রাপ্ত সুপার খতিয়ে দেখছেন।” ওই হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার স্বপন পাঠক বলেন, “করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই এক ব্যক্তির মৃতদেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এমন গাফিলতির ঘটনা কী ভাবে ঘটল সুপারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গড়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে সুপারকে রিপোর্ট

Advertisement

দেওয়া হবে।”

এ দিকে বুধবার সকালেই ঘটনাটি জানাজানি হলেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত পুরুলিয়া স্বাস্থ্য দফতর বা জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেননি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। স্বপনবাবু বলেন, “পুরুলিয়া জেলাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে কি না, তা খোঁজ নিচ্ছি।”

তবে ঘটনার কথা শুনে উদ্বিগ্ন ওই এলাকার অনেকে। বহু চেষ্টা করেও মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মঙ্গলবার সারা রাত ওই ব্যক্তির দেহ তাঁর বাড়িতে ছিল। ভোরে গ্রামের অদূরে শ্মশানে দেহ দাহ করা হয়। মৃতদেহের কাছে তাঁর পরিবার তো বটেই, আশপাশের লোকজনও গিয়েছিলেন। তাঁদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে নিশ্চিত না হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল দেহটি পরিবারকে দিয়ে ঠিক করেনি।’’ বিডিও (রঘুনাথপুর ১) অনির্বাণ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিকেল পর্যন্ত বাঁকুড়া মেডিক্যাল থেকে এ নিয়ে কোনও খবর দেওয়া হয়নি।’’ বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বিকেলে বলেন, “করোনা আক্রান্তের শেষকৃত্যে যাওয়া লোকজন ও তাঁর পরিবারের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে চিহ্নিত করা দরকার। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হবে।” যদিও এ দিন সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার ও পুরুলিয়া জেলা উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) গুরুদাস পাত্র জানান, বাঁকুড়া থেকে তাঁদের এ ব্যাপারে কোনও খবর দেওয়া হয়নি। জেলাশাসক বলেন, ‘‘কী ঘটেছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’

ঘটনা হল, করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের দেহ পরিবারকে দেওয়া হয় না। করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া ব্যক্তির মৃত্যু হলে তাঁর রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত দেহ হাসপাতালেই রাখার নিয়ম। অথবা পুরসভার সহায়তায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই শেষকৃত্য করে। লকডাউন পর্ব থেকেই বাঁকুড়া মেডিক্যালে এই নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এক আধিকারিক। তিনি বলেন, “বহু রোগীর ক্ষেত্রে রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় পরিবারের হাতে দেহ না দিয়ে পুরসভার সহায়তায় শেষকৃত্য করা হয়েছে। এমনও হয়েছে, পরে জানা গিয়েছে তেমন অনেকেই করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতেই এমনটা করা হয়।” বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) রাজু মিশ্র বাঁকুড়া মেডিক্যালের সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement