রথযাত্রা উপলক্ষে পাঁপড় ভাজা হচ্ছে। রবিবার সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
‘রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম...’
রবিবার রথযাত্রা উপলক্ষে বাংলার এই পরিচিত ছবির দেখা মিলল জেলা জুড়ে। ছুটির দিন হওয়ায় এ বার ভিড়ও ছিল বেশি। রথযাত্রার পাশাপাশি জেলা কয়েকটি জায়গায় বসেছে রথের মেলাও। কয়েকটি জায়গায় আবার দুর্গাপুজোর খুঁটিপুজোও হয়ে গেল।
জেলা সদর সিউড়ির অন্যতম প্রাচীন রাধাবল্লভ মন্দিরের রথযাত্রা। বারবারে মতো এ বারও প্রচুর ভক্তের উপস্থিতিতে এই রথ গোটা শহর পরিক্রমা করে। শহরের দত্তপুকুর পাড়ার রথ, বারুইপাড়ার রথ, মান্নাবাড়ির রথ, কেন্দুয়ার রথ ঘিরেও মানুষের আগ্রহ ছিল। কেন্দুয়ার রথকে ঘিরে সিউড়ির রক্ষাকালী তলায় ছোটখাটো মেলাও বসে। সিউড়ি যাত্রিক ক্লাবের মহিলা পরিচালিত রথও শহরবাসীর কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল। পাইকপাড়ার জগন্নাথ মন্দিরেও রথযাত্রা আয়োজিত হয়। সিউড়ি ১ ব্লকের আলুন্দা গ্রামেও ঐতিহ্য মেনে আয়োজিত হয়েছে দত্তবাড়ির রথযাত্রা। রথের জন্য অতিরিক্ত জমায়েতের কারণে যানজট এড়াতে ট্রাফিক পুলিশ ছিল। তার পরেও কয়েকটি জায়গায় যানজট হয়।
ইংল্যান্ডে তৈরি হেতমপুর রাজবাড়ির পাঁচচূড়া পিতলের রথকে ঘিরে প্রতি বছরই দুবরাজপুরবাসীর আকর্ষণ থাকে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বর্তমানে এই রথযাত্রার পরিচালনা করে গৌড়ীয় মঠ। তবে মেলা ও ভিড় থাকলেও রাজবাড়ির রথের জৌলুস এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে বলে জানান স্থানীয়েরা। দুবরাজপুর আশ্রম পরিচালিত কাঠের রথটিও এ দিন আশ্রম থেকে বেড়িয়ে গোটা শহর পরিক্রমা করেছে। দুবরাজপুর মহাপ্রভু মন্দিরের লোহার রথ এবং ডাঙালতলার রথও প্রায় পুরো শহর পরিক্রমা করে। দুবরাজপুর ও হেতমপুরে রথ দেখতে, রশিতে টানতে রাস্তার দু’পাশে অনেকে ভিড় করেছিলেন। পাশাপাশি, এ দিন সকালে খুঁটিপুজো হয়েছে দুবরাজপুর ডাকবাংলো পাড়া ও দাসপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজোর।
বোলপুরের বেশ কয়েকটি বনেদি বাড়ির রথ-সহ ছোট-বড় মিলিয়ে এ দিন প্রায় ১৫টি রথ রাস্তায় নামে। কচিকাঁচারও ছোট ছোট রথ নিয়ে পথে নেমেছিল। রথযাত্রা উপলক্ষে কোথাও জগন্নাথকে মালপোয়ার ভোগ, কোথাও লুচির ভোগ দেওয়া হয়। বোলপুরের বনেদি বাড়িতে রথযাত্রার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য দর্জিপাড়ার চন্দ্রবাড়ির রথ, হরগৌরী তলার মণ্ডলবাড়ির রথ।
পুরীর প্রথা মেনে বোলপুর মকরমপুরের শ্রীভক্তি বেদান্ত আশ্রমের তরফে রথযাত্রা পালন করা হয়। এ দিন সকালে জগন্নাথের বিশেষ পুজো হয়। এর পরে জগন্নাথকে চার রকমের অন্ন, ১২ রকমের ভাজা, শাক, সবজি, দই, মিষ্টি-সহ ৫৬ রকমের ব্যঞ্জন দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। বিকেলে জগন্নাথকে রাজবেশ পরিয়ে বিশেষ আরতি করে রথযাত্রা উৎসবের সূচনা করা হয়। রথের আগে আগে ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করেন ভক্তেরা। এ পাশাপাশি, বোলপুর দেবেন্দ্রগঞ্জ সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও বোলপুর বাইপাসের রবীন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘের দুর্গাপুজোর খুঁটিপুজোও হয় এ দিন।
তারাপীঠের দেবী তারার রথ ছাড়াও রামপুরহাট শহরে ইস্কনের রথকে ঘিরে বিশেষ আগ্রহ থাকে স্থানীয়দের মধ্যে। প্রতি বছরের মতো এ বারও রথের দিন বিকেলে ইস্কনের মন্দির থেকে রথযাত্রা শুরু হয়। সেই রথ গোটা রামপুরহাট শহর পরিক্রমা করে। এই উপলক্ষে শহর জুড়ে এক দিনের মেলাও বসে। এ ছাড়া, রামপুরহাট সংলগ্ন আয়াস গ্রামেও রথযাত্রা আয়োজিত হয়। খুঁটিপুজো হয়েছে রামপুরহাট নবীন ক্লাবে।
মহম্মদবাজার থানা এলাকার গণপুর এবং কুমোরপুর গ্রামে রথ উপলক্ষে এক দিনের মেলা বসে। পাশাপাশি, মহম্মদবাজারের পুরাতনগ্রাম এবং গিরিপুর গ্রামেও ঐতিহ্য মেনে রথযাত্রা আয়োজিত হয়। দিনভর কীর্তন এবং প্রসাদ বিতরণেরও আয়োজন করা হয়। রথযাত্রার দিন নলহাটির কামারপাড়া এলাকায় ৫০০ বছরের প্রাচীন দুর্গামন্দিরে ঐতিহ্য মেনে আয়োজিত হয় খুঁটিপুজোর। পাশাপাশি নলহাটির ভদ্রপুর-সহ একাধিক এলাকায় রথ উপলক্ষে পুজো, কীর্তন ও মেলার আয়োজন করা হয়।