—প্রতীকী চিত্র।
ঘরের চার দেওয়ালই তার জগৎ। বাড়ির বাইরে পা-ই রাখে না সে। কখনও বাঁশের খুঁটিতে তাকে বেঁধে রাখা হয়। আবার কখনও দড়ি, গামছা, ওড়নার বাঁধনে থাকতে হয় তাকে। এ ভাবেই গত সাত-আট বছর ধরে দিন গুজরান করছে বীরভূমের দুবরাজপুর এলাকার এক কিশোরী।
ছোটবেলায় অল্পবিস্তর কথা বললেও পরে আর কথা ফোটেনি ওই কিশোরীর মুখে। কিন্তু তাই বলে তাকে বেঁধে রাখা হবে কেন? পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, বেঁধে না-রাখলে যেখানে সেখানে চলে যায় ওই কিশোরী। বাড়িতে অর্থসঙ্কট রয়েছে। তাই কিশোরীর চিকিৎসাও করাতে পারেনি তার পরিবার।
কিশোরীর বাবা কার্তিক বাগদি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। দিনে আয় বলতে দু-তিন কেজি চাল। আর এতেই কোনও রকমে সংসার চলে। মা শকুন্তলা বাগদি বাড়িতেই থাকেন। মেয়েকে এই অবস্থায় একলা ফেলে বাইরে বেরোতে পারেন না তিনিও। কিশোরীর বাবার কথায়, ‘‘দিনরাত মেয়েকে বেঁধে রাখতে হয়। খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু করার নেই।’’ মেয়ের চিকিৎসার জন্য সরকারি সাহায্যের পথ চেয়ে বসে রয়েছেন নাবালিকার বাবা-মা। বিডিও অফিস থেকে পঞ্চায়েত অফিস— বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি তাঁদের।
গ্রামবাসী পার্থ বাগদি বলেন, ‘‘বিডিও অফিসে গিয়ে ঘুরে আসতে হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্যদের প্রত্যেককেই জানানো হয়েছে বিষয়টি। দুবরাজপুরের বিধায়ককেও বিষয়টি জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। নেতারা ভোটের সময় আসেন। কিন্তু ভোট চলে গেলে বিদায়। কেউ কোনও খবর নেন না।’’
দুবরাজপুরের বিডিও রাজা আদক বলেন,‘‘খুবই দুঃখজনক। বিএমওএইচ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে কিশোরীকে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট দিয়ে মানবিক প্রকল্পে মাসে ১০০০ টাকা করে যাতে দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করব। তাঁদের কোনও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেই, সেটাও যাতে হয় তারও ব্যবস্থা করে দেব। ঘর নিয়ে কোনও বিষয় থাকলে সেটাও দেখব। সব সময় ব্লক প্রশাসন তার পাশে থাকবে।’’
অন্য দিকে, দুবরাজপুর ব্লকের তৃণমূলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিউল খান বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। তৃণমূলের পক্ষ থেকে যতটা সাহায্য করার করব।’’