তছনছ: কুলবনি গ্রামে চন্দনা অধিকারীর বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
ভোটের ফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা কাটতেই বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় গোলমালের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
শুক্রবার রাতে তালড্যাংরা থানার পাঁচমুড়ার কাছে কুলবনি গ্রামে জেলা পরিষদের সদস্যা তৃণমূলের চন্দনা অধিকারীর বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির ছেলেদের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে পাঁচমুড়ায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র অফিসে ভাঙচুর চলে। শুক্রবার রাতে বিষ্ণুপুরের বগডহরা এলাকায় এক বিজেপি কর্মীকে মারধরের পাল্টা অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুরুলিয়ার বলরামপুরেও এ দিন এক বিজেপি কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “ভোট পরবর্তী হিংসার খবর পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জেলা জুড়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’’ তিনি জানান, এই মুহূর্তে জেলায় চার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। তাঁদেরও কাজে লাগানো হচ্ছে।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ চন্দনা অধিকারী আগে তালডাংরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, শুক্রবার সকালে তাঁর বাড়ির কাছে বিজেপির ছেলেরা বাজি ফাটিয়েছিলেন। রাত ন’টা নাগাদ বিজেপির প্রায় ৩০-৪০ জন ছেলে তাঁর বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা খেতে বসছিলাম। সেই সময় বিজেপির এক দল ছেলে কাটারি, লাঠি হাতে নিয়ে হামলা চালায়। টিভি, ফ্রিজ, পাখা, দরজা, জানালা ভেঙে দেয়। খাবার ফেলে দেয়।
শনিবার গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভিতর তখনও লণ্ডভণ্ড। জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। চন্দনার স্বামী কাজল অধিকারী নার্ভের সমস্যায় অসুস্থ। ক’দিন আগে সাত মাসের ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসেছেন তাঁদের মেয়ে তনুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। তনুশ্রী বলেন, ‘‘বাইরে হইচই শুনে ঘর থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে বেরোতেই দেখি, দুষ্কৃতীরা লাঠি ও কাটারি নিয়ে বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করেছে। আতঙ্কে আমরা কান্নাকাটি শুরু করে দিই। মাকে ওরা গালমন্দ করছিল। আমাদের অনুরোধ সত্ত্বেও ওরা থামেনি। শেষে ইলেকট্রিকের আলো লাঠি দিয়ে ভেঙে দেয়। যাওয়ার সময় আমার গলার সোনার হারটাও ছিনিয়ে নেয়।’’ চন্দনাদেবীর দাবি, পাশের কয়েকটি তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতেও হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। তিনি পুলিশের কাছে মৌখিক ভাবে অভিযোগ জানালেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেননি।
এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ পাঁচমুড়া মোড়ে তৃণমূলের আইএনটিটিইউসি অফিসেও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। তির সেই বিজেপি কর্মীদের দিকে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের বাইরে পড়ে রয়েছে ভাঙাচোরা চেয়ার, টিভি, টেবিল ফ্যান। মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে তৃণমূলের গুচ্ছ গুচ্ছ পতাকা, ফেস্টুন। দলনেত্রীর ছবিও পড়ে বাইরে। খবর পেয়ে এসেছে পুলিশ বাহিনী।
পাঁচমুড়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি উত্তম গড়াই দাবি করেন, ‘‘হামলার সময় ওই অফিসে দলের কর্মীরা ছিলেন না। সিপিএম থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া লোকজন হঠাৎ সেখানে ভাঙচুর চালায়।’’ এ ক্ষেত্রেও বিকেল পর্যন্ত থানায় অভিযোগ হয়নি।
বিজেপির বাঁকুড়া সংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের দাবি, ‘‘তালডাংরার দুই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়। এ সব তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর তাদের গোষ্ঠীর মধ্যেই এই ঝামেলা।’’
তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা বিষ্ণুপুরের বগডহরার বিজেপি কর্মী আজিজুল মণ্ডলকে মারধরের অভিযোগ ওঠে শুক্রবার বিকেলে। বিজেপির মণ্ডল সভাপতি বিমল ঘরামির অভিযোগ, ‘‘পরাজয়ের রাগে তৃণমূলের কর্মীরা আমাদের ওই কর্মীকে বাঁশ দিয়ে মারধর করে।’’ তাঁর দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করছেন।
শুক্রবার রাতে বলরামপুরের বেলা ও বোঙাপটমের মাঝে সোনাঝুরির জঙ্গলে দুই বিজেপি কর্মীর উপরে হামলার অভিযোগ তুলেছেন দলের জেলা সম্পাদক বাণেশ্বর মাহাতো। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের ছেলেরাই হামলা চালায়। অন্যদিকে, তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি সুভাষ দাসের পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপির কর্মীরাই আমাদের এক কর্মীর বাড়িতে পটকা ছুড়ে দেয়।’’ দ্রুত পুলিশ বাহিনী সেখানে পৌঁছলে গোলমাল ছড়ায়নি। তবে বেলা গ্রামের এক বিজেপি কর্মী তরণী দাসকে বলরামপুর বাজারের পথে তৃণমূলের কর্মীরা মারধর করে বলে নতুন করে শনিবার সকালে অভিযোগ ওঠে। যদিও তা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।