প্রচারে: দেওয়া হবে এমন ফ্লেক্স। নিজস্ব চিত্র
জমি-জট কাটিয়ে উদ্বাস্তু কলোনিতে বসবাসকারী পরিবারকে জমির মালিকানা (ফ্রি হোল্ড টাইটেল ডিড) দেওয়া হবে। মাস কয়েক আগেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই প্রক্রিয়াই শুরু হতে চলছে জেলায়।
জেলায় যে সব উদ্বাস্তু কলোনিতে বসবাসকারী পরিবারগুলির পুনর্বাসন ও নিঃর্শত দলিল দেওয়া হয়নি, এ বার সেই সব পরিবার সেটা পাবেন— এই মর্মে প্রচারে নামছে জেলা ভূমি ভূমি সংস্কার দফতর। ঠিক হয়েছে, উদ্বাস্তু কলোনিগুলিতে ফ্লেক্স টাঙিয়ে প্রচার চলবে। ফ্লেক্সে লেখা, রাজ্য সব উদ্বাস্তু কলোনিকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে এবং প্রতি যোগ্য পরিবারকে নিঃশর্ত দলিল প্রদান করা হচ্ছে, যাতে স্থানীয়রা এ ব্যাপারে সচেতন থাকেন। সিউড়িতে এমন ফ্লেক্সের দেখাও মিলছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশে চলতি মাসে ১০, ১১ ও ১৩ তারিখ ফ্লেক্স লাগানোর দিন ধার্য হয়েছে। তারপরই ফ্রি হোল্ড টাইটেল ডিড দেওয়া শুরু হবে।
একদিকে সম্ভাব্য জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ নিয়ে সংশয় ও অন্যদিকে লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ ও আইনে পরিণত হওয়া— এই পরিস্থিতিতে কয়েকমাস আগেই তৎরপর হয় রাজ্য সরকার। নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে ছিলেন, রাজ্য সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের জমির মালিকানা আগেই দিয়েছে রাজ্য। এ বার কেন্দ্রীয় সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানার জমিতে গড়ে ওঠা উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের জমির ‘ফ্রি-হোল্ড’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। তখনই বলা হয়েছিল এতে রাজ্য বসবাসকারী ২৬ হাজার পরিবার উপকৃত হবে।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার ও উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ৪৯টি নথিভুক্ত রেগুলারাইজড উদ্বাস্তু কলোনিতে বসবাসকারী ৩২৮৬টি পরিবারের মধ্যে মাত্র ২০টি বাদে বাকি সব পরিবারকেই জমির পরচা ঠিক করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি যে ৪৭টি কলোনিতে বসবাসকারি পরিবারকে জমির দলিল দেওয়া বাকি, সেই কলোনিগুলি হয় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি বা কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের জমিতে বা অংশীদারিত্বে রয়েছে। সেগুলির সমীক্ষা করে রাজ্য সরকারকে পাঠায় সংশ্লিষ্ট দফতর।
ঘটনা হল, কেন্দ্র ও ব্যক্তিগত জমির কলোনিগুলির বাসিন্দাদের কী ভাবে জমির মালিকানা দেওয়া যায়, তা নিয়ে জটিলতা ছিল। কারণ, কেন্দ্র বা ব্যক্তি মালিকরা সরকারের হাতে জমি তুলে না দিলে রাজ্য তা উদ্বাস্তুদের নামে রেকর্ড করে দিতে পারে না। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনার ঘোষণা করতেই তৎপরতা বাড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উদ্বাস্তুদের সমস্যা সুরাহা করতে তৎপর হয়ে ওঠে ভূমি দফতরও। মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাব অনুয়ায়ী, কেন্দ্র বা ব্যক্তি মালিকদের কাছ থেকে জমি পাওয়ার জন্য রাজ্য আর অপেক্ষা করবে না। যাঁরা গত ৪০ বছর ধরে কলোনির জমি ভোগদখল করছেন, তাঁদের মালিকানা দিয়ে দেবে ভূমি দফতর। সেই জন্য প্রচারে ‘যোগ্য’ কথাটা উল্লেখ করা হয়েছে। সেটা যে পরিণতির দিকে এগোচ্ছে জেলায় সরকারি তরফে প্রচারে নামা তারই ইঙ্গিত।
জানুয়ারি মাসের তিন তারিখ এনআরসি, এপিআর ও সিএবির বিরোধিতা করার পাশাপাশি বীরভূমে বসবাসকারী উদ্বাস্তু কলোনির প্রতি পরিবারকে নিঃশর্ত দলিল প্রদান, দলিল প্রাপকদের নামে সেই জমির পরচা বানিয়ে দেওয়া-সহ একগুচ্ছ দাবিতে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার)কে স্মারক লিপি দিয়েছিল সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদের বীরভূম শাখা। তখনই তাদের দাবি মানার আশ্বাস দেওয়া হয়।
প্রচার শুরু করার প্রসঙ্গ ওই সংগঠনের জেলা সম্পাদক মানিক লোধ বলছেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি তো সেটাই ছিল। সে ব্যাপারে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হওয়ায় খুশি। জেলার উদ্বাস্তু কলোনিতে বসবাসকারিরা নিঃশর্ত দলিল পেলে খুশি হব।’’