fraud Mutation of land

জাল দলিলে যিনি স্ত্রী, তিনিই মেয়ে! 

নিজের নামে দলিল এবং মিউটেশন থাকলেও নিশ্চিন্ত হওয়ার জো নেই। হয়তো মালিক জানতেই পারলেন না, তাঁর অজান্তে সেই জমির জাল দলিল তৈরি করে বিক্রি করে দিয়েছে অন্য কেউ। পাট্টা পাওয়া জমি, দেবোত্তর সম্পত্তি বা নাবালকের সম্পত্তিও জালিয়াতি করে বিক্রির ঘটনা সামনে এসেছে বীরভূমে। নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। খোঁজ নিল আনন্দবাজার

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ০২:২১
Share:

প্রতীকী ছবি

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের মিউটেশন অনুয়ায়ী আপনার নামেই জমি। দলিলও আপনার নামে। নির্বিবাদ ভাবে সেটি আপনার দখলেই রয়েছে। এ-সব ভেবে নিশ্চিন্তে রয়েছেন আপনি। কিন্তু, নিশ্চিন্তে থাকলেই ভুল করবেন। হতেই পারে আপনি জানলেন না, অথচ আপনার জমি অন্য কেউ মালিক সেজে বিক্রি দিল।

Advertisement

মিউটেশন না হলেও আপনার বাবার মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকার সূত্রে একটি জমির মালিক হলেন আপনি। সেই জমির জন্য রাজস্বও দেন। কিন্তু, হতেই পারে আপনার অজান্তে জাল ওয়ারিশন সার্টিফিকেট বের করে অন্য কেউ সেটা বিক্রি করে দিয়েছে।

অবাক লাগলেও সত্যি, এমন ঘটনা আকছার ঘটে চলেছে বীরভূমে। শুধু কী তাই, পাট্টা পাওয়া জমি, দেবোত্তর সম্পত্তি বা নাবালকের সম্পত্তি— যেটা আদালতের নির্দেশ ছাড়া বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায় না, বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সে-সবও।

Advertisement

এমন নানা অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি ডিরেক্টোরেট অব রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প রেভিনিউ এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের (যে দফতর দু’টি জমি দলিল ও রাজস্ব সংক্রান্ত রেকর্ড ঠিক রাখে) আধিকারিকদের নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি, তিন জন মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক, ব্লক ভূমি সংস্কার অধিকারিকেরা। এ ছাড়াও ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার অসিত জোয়ারদার এবং ৯ জন অতিরিক্ত জেলা রেজিস্ট্রার।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘প্রচুর অভিযোগ আসছিল। জমির মালিক সেজে, জাল দলিল তৈরি করে বা মিথ্যা ওয়ারিশন সার্টিফিকেট দিয়ে অন্যের জমি বেচাকেনার অভিযোগ ছিল। এমনকি নাবালকের (মাইনর) সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার মতো অভিযোগও সামনে এসেছে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট দুই দফতরের সমন্বয়ের অভাব কোথায়, কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সেসব ধরে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। তার সমাধানের চেষ্টা হয়েছে।

কেন এমন একটি বৈঠকের প্রয়োজন পড়ল তা, ভূমি দফতর থেকে পাওয়া উদাহরণেই স্পষ্ট হবে।

এক) মিথ্যা ওয়ারিশন শংসাপত্রের ভিত্তিতে বোলপুরে এক বাঙালি মহিলা (যাঁকে এক হিন্দিভাষীর বিধবা হিসেবে দেখানো হয়েছে) চারটি দলিল করে ওই হিন্দিভাষী ব্যবসায়ীর স্ত্রী-র বিশাল পরিমাণ জমি লক্ষ লক্ষ টাকায় আট জনকে বেচে দিয়েছিলেন। মজার বিষয় হল দলিলে ওই বাঙালি মহিলাকেই আবার জমির আসল মালিকের (ওই ব্যবসায়ী) মেয়ে হিসেবে দেখানো হয়েছে জাল শংসাপত্রে দেখানো হয়েছে। কিন্তু, জমির মিউটেশন করার সময় পদবি দেখে সন্দেহ হওয়ায় জালিয়াতি ধরা পড়ে।

দুই) মুরারইয়ের আব্দুল হালিম এবং হুমায়ন কবীরের নামে থাকা একটি জমি তাঁদের পরিচয়ে অন্য কেউ প্রায় ৭ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল। যিনি কিনেছেন সেই জমি, তিনি আবার জেলা পরিষদের এক কর্মাধ্যক্ষ। এই খবর পেয়ে আসল মালিকেরা যখন প্রশাসনের দ্বারস্থ হন, তখন ওই কর্মাধ্যক্ষ দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছিল।

জমি নিয়ে জালিয়াতির এমন উদাহরণ এই জেলায় বহু। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী রাজস্ব বা রেভিনিউ রেকর্ড কোনও টাইটেল বা মালিকানা সত্ত্ব দেওয়া নয়। ‘টাইটেল’ হিসেবে গণ্য হয় আদালতের কোনও ‘অর্ডার’ বা কোনও রেজিস্ট্রিকৃত ‘ডিড’ বা দলিল। সেই দলিলের উপর দাঁড়িয়ে মিউটেশন করে ভূমি দফতর। ভূমি-কর্তাদের দাবি, জেলার বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে পাঠানো সেই দলিল ধরে মিউটেশন করতে গিয়েই সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির জন্য জাল ওয়ারিশন সার্টিফিকেটের জন্যও। সেই জন্যই জীবিতকে মৃত দেখানো হচ্ছে। একের জমি অন্যর নামে মিউটেশন হয়ে যাচ্ছে। (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement