সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায়। —নিজস্ব চিত্র।
ঝকঝকে রোদ। কনকনে ঠান্ডা পড়তেই চড়ুইভাতির মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে শুশুনিয়ার কোলে। এরই মধ্যে বড় সিদ্ধান্ত নিল বন দফতর। সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায়।
ফিবছর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় শুশুনিয়া বহু এলাকা। মৃত্যু হয় জীবজন্তুরও। পাহাড়ি জঙ্গলে সেই আগুনকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে বন দফতর। পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় জলের ট্যাঙ্ক তৈরি ও পাহাড়ের চূড়ায় বনকর্মী মোতায়েন রাখার পাশাপাশি এ বার আধুনিক সিসি ক্যামেরার সাহায্যে পাহাড়ের দুর্গম অংশে রাতদিন নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই ব্যবস্থা সফল হলে আগামী দিনে পাহাড়ের সর্বত্রই সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানিয়েছে বন দফতর।
বাঁকুড়ার দ্বিতীয় উচ্চতম পাহাড় শুশুনিয়া। এই শুশুনিয়া পাহাড় যে শুধু পর্যটনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়। জীববৈচিত্রের দিক থেকেও এই পাহাড় অত্যন্ত গুরুত্ব অপরিসীম। হাজার হাজার প্রজাতির গাছ, লতা ছাড়াও অসংখ্য সরীসৃপ, পোকামাকড়-সহ বিভিন্ন প্রাণীর বসবাস শুশুনিয়ায়। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে প্রায় প্রতি বছর শুশুনিয়া পাহাড়ে নিয়ম করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ের বিশাল ব্যাপ্তি ও বেশ কিছু এলাকা দুর্গম হওয়ায় আগুন লাগার দীর্ঘক্ষণ পরে তা নজরে আসছে বন দফতরের। বন দফতরের দাবি, প্রায় প্রতিবারই তাদের নজরে আসার আগেই আগুন পাহাড়ের একটা বড় অংশে ছড়িয়ে পড়ছে। আর তার ফলে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বন দফতরকে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে বহুগুণ।
পাহড়ের এই আগুন রোধে শুশুনিয়া পাহাড়ে লাগাতার প্রচার কর্মসূচি চালানোর পাশাপাশি এ বার আগুন লাগলে তড়িঘড়ি যাতে তা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তার উপর জোর দিচ্ছে বন দফতর। ইতিমধ্যেই পাহাড়ের গায়ে বিভিন্ন উচ্চতায় মোট ছ’টি বিশালাকার জলের ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে। সেই ট্যাঙ্কগুলিতে বর্ষার জল মজুত করা ছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পাম্পের সাহায্যে তা ভর্তি করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হঠাৎ করে আগুন লাগলে এই ট্যাঙ্কগুলির জল ব্যবহার করে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা থাকছে। তা ছাড়া গত বছর থেকেই আগুন লাগার মরসুমে পাহাড়ের চূড়ায় ক্যাম্প করে বনকর্মী মোতায়েন রাখার ব্যবস্থা করেছে বন দফতর। এই কর্মীরা দিনেরাতে লাগাতার নজরদারি চালান পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে। পাহাড়ের কোথাও আগুন বা ধোঁয়া দেখতে পেলেই দ্রুত তাঁরা ব্লোয়ার নিয়ে পাহাড়ের ওই অংশে ছুটে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করার পাশাপাশি যোগাযোগ করেন স্থানীয় বন দফতরে। বন দফতর দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে। বন কর্মীদের এই নজরদারির পাশাপাশি এবার পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় নজরদারির জন্য বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে শুশুনিয়া পাহাড়ের মাঝামাঝি উচ্চতায় পাথর খাদান এলাকার বেশির ভাগটাই দুর্গম। সেই এলাকাতেই সিসি ক্যামেরার সাহায্যে নজরদারি চালানো শুরু হয়েছে। সিসি ক্যামেরা থেকে লাগাতার পাঠানো ছবিতে সর্বদা নজর রাখা হচ্ছে। বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘‘দুর্গম ওই এলাকায় আগুন লাগলে তা দীর্ঘক্ষণ পরে বন কর্মীদের নজরে আসে। ফলে ততক্ষণে আগুন ভয়াবহ আকার নেয়। এলাকা দুর্গম হওয়ায় সেখানে বনকর্মীরা প্রতিনিয়ত নজরদারিও চালাতে পারে না। এই এলাকাতেই পরীক্ষামূলক ভাবে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এই উদ্যোগ সফল হলে আগামীদিনে আরও বেশ কয়েকটি ক্যামেরা বসিয়ে পাহাড়ের প্রায় সব অংশেই নজরদারি চালানো সম্ভব হবে।’’