বাইরে থেকে শিকারি আসা আটকাতে চলছে টহল। বান্দোয়ানে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
শিকার উৎসবে রক্তপাত ঠেকানো গিয়েছে বলে দাবি করল বন দফতর। বৃহস্পতিবার সেন্দ্রা উপলক্ষে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ে যায় শিকারিদের কয়েকটি দল। তবে তাঁদের প্রাণিহত্যা করা থেকে রোখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বনাধিকারিকেরা। ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কয়েকটি দলকে দেখা গিয়েছিল। তবে পাহাড়ে পৌঁছনোর আগেই তাঁদের আটকে, বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। লাগাতার বিভিন্ন ভাবে প্রচার চালানো হয়েছে। কোনও বন্যপ্রাণী হত্যার খবর মেলেনি।”
প্রথা মেনে প্রতি বছর ৭ বৈশাখ সেন্দ্রা উপলক্ষে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড় লাগোয়া জঙ্গলে হয় শিকার উৎসব। রাইকা পাহাড় সংলগ্ন এলাকার আদিবাসী মানুষজন পাহাড় ও জঙ্গলে শিকারে যেতেন। ভিন্ জেলা থেকেও হাজির হত শিকারিদের দল। তবে গত কয়েক বছর ধরে শিকারিদের দলগুলি তেমন নজরে আসেনি, জানাচ্ছে বন দফতর।
এ দিন সকালে উদলবনি, রাহামদার দিক থেকে শিকারিদের কয়েকটি দল রাইকা পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। তির-ধনুক, বল্লম দেখে তাঁদের আটকান বনকর্মীরা। পরে, তাঁদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। দুপুর নাগাদ কুশবনি গ্রামের অদূরেও শিকারিদের একটি দলকে দেখা যায়, পুজো সেরে বাড়ির দিকে রওনা দিতে। দলের এক সদস্য সুশান্ত মান্ডি বলেন, “রীতি মেনে শিকারের উদ্দেশে বেরিয়েছিলাম। জঙ্গলের কাছাকাছি গিয়ে পুজো সেরে বাড়ি ফিরেছি।”
দফতর সূত্রে জানা যায়, রাইকা পাহাড়ের জঙ্গল এলাকায় নজরদারির জন্য আশপাশে আটটি জায়গায় ক্যাম্প করেছিলেন দফতরের আধিকারিকেরা। বাইরে থেকে আসা শিকারি যাতে কোনও ভাবে ঢুকতে না পারে, সে জন্য জঙ্গলের রাস্তার টহল চলেছে। শিকারিদের দলকে রুখতে গ্রামের যৌথ বন পরিচালনের সদস্যদের নিয়ে দিনভর জঙ্গল এলাকায় টহল দিয়েছেন বনকর্মীরা। এর পাশাপাশি, রাইকা পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে বান্দোয়ান ১, বান্দোয়ান ২, যমুনা ও মানবাজার ২ রেঞ্জ এলাকা থেকে বনকর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছিল। শিকারিরা যাতে কোনও ভাবে জঙ্গলে না যান, সে জন্য আগে থেকে মাইকে প্রচার চলেছিল।
বন্যপ্রাণ শিকার আটকাতে বৃহস্পতিবার সভা হল পাত্রসায়র রেঞ্জ অফিসে। ছিলেন পাত্রসায়রের বিডিও নিবিড় মণ্ডল, পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পার্থপ্রতিম সিংহ, পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ সুব্রত কর্মকার। পাত্রসায়রের রেঞ্জ আধিকারিক শিবপ্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘শিকার উৎসব চলাকালীন যাতে কোনও বন্যপ্রাণ হত্যা না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন ও সমাজের সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে সচেতনতা প্রচারে।’’