টনক নড়াতে ডেঙ্গির গান নিয়ে পথে বাউলেরা

তাঁরা গুপি-বাঘা নন। গান গাইলে বাঘ ঝিম মেরে যায় না। তবে মদন দাস, সন্ধ্যা গায়েনদের মতো লোকশিল্পীরা বিশ্বাস করেন, কানের ভিতর দিয়ে গিয়ে একেবারে মরমে নাড়া দিতে পারে গান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৮
Share:

বিটরা গ্রামে গানে গানে সচেতনতা প্রচার। নিজস্ব চিত্র

তাঁরা গুপি-বাঘা নন। গান গাইলে বাঘ ঝিম মেরে যায় না। তবে মদন দাস, সন্ধ্যা গায়েনদের মতো লোকশিল্পীরা বিশ্বাস করেন, কানের ভিতর দিয়ে গিয়ে একেবারে মরমে নাড়া দিতে পারে গান।

Advertisement

মশা মারতে সেই গানকেই হাতিয়ার করে নেমেছেন বিষ্ণুপুরের রাস্তায়। ডেঙ্গু-ভয়ে কাবু শহরবাসীকে বোঝাচ্ছেন, একটু নিয়ম মেনে চললেই আর ভাবনা নেই।

এই কাজের নেপথ্যে অবশ্য রয়েছে বিষ্ণুপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। বাউল শিল্পী মদন দাস, সন্ধ্যা গায়েন, বিশ্বনাথ বাউড়ি, মনসা বাউড়িরা দফতরের নথিভুক্ত শিল্পী। থাকেন অযোধ্যা পঞ্চায়েতের বিটরা গ্রামে। নানা অনুষ্ঠানে ডাক পান। বৃহস্পতিবার তাঁরা মহকুমা অফিস থেকে বেরিয়ে শহর ঘুরেছেন। তার পরে রওনা হয়েছেন পাত্রসায়র আর ইন্দাসের দিকে।

Advertisement

বিষ্ণুপুর শহরে এই বছর এখনও পর্যন্ত কোনও ডেঙ্গি রোগীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে এলাকায় ঘুরলে আর নিশ্চিন্ত থাকার জো নেই। বৃহস্পতিবারই চোখে পড়ল যত্রতত্র জমে জল। সে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সামনেই হোক, আর খাস পুরসভার রাস্তায়।

রামানন্দ কলেজ থেকে শ্যামরাই মন্দিরে যাওয়া রাস্তা রোজ প্রচুর পর্যটক ব্যবহার করেন। সেখানে পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রীনিবাসের পাশেই জমে রয়েছে জল।

কোন্নগর থেকে আসা যুবক তথাগত দাস পার হতে গিয়ে বললেন, ‘‘নতুন তৈরি রাস্তা। কংক্রিট আর পিচের জোড়ে জল জমেছে। পুরসভার কি কোনও নজর নেই?’’

প্রশ্নটা পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার রবীন্দ্রনাথ সরকারকে করা হলে তিনি বলেন, ‘‘জানি না তো। কলকাতায় কাজে আছি। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের ফোন করে বলছি ব্যবস্থা নিতে।’’

লোকশিল্পীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা ডেঙ্গি নিয়ে কিছু করার তাগিদ নিজেরাই অনুভব করেছিলেন। পেশায় তাঁরা প্রায় সবাই দিনমজুর। মদন, বিশ্বনাথরা বলেন, ‘‘খবরের যখন দেখি, ফুটফুটে বাচ্চাগুলো অকালে প্রাণ হারাচ্ছে, খুব কষ্ট হয়। মাথায় অনেক দিন ঘুরছিল— শুধু আনান্দ দেওয়া নয়, একটু সচেতনতার গান বাঁধতে হবে।’’

তাঁরা জানান, দিন পাঁচেক ধরে রোজ সন্ধ্যায় সবাই মিলে বসেছেন। মিলেমিশে গান বেঁধেছেন। প্রচারের ভ্যান থেকে এ দিন ভেসে এসেছে সেই কথা, সেই সুর। তাঁরা গেয়েছেন, ‘‘আমায় যেতে হল দেশ ছেড়ে মশার কামড়ে/ একটু সচেতন হলে পারতাম আমি ডেঙ্গি এড়াতে।’’

দিনের শেষে বিষ্ণুপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রামশঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘শিল্পীরাও তো সমাজের সচেতন মানুষ। শুধু বিনোদন নয়, সময়ের উপযোগী বার্তা দিয়ে তাঁরা সেটাই বোঝালেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement