অনুষ্ঠান: জয়দেবের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিবিধ সরকারি প্রকল্পের প্রচারে লোকসঙ্গীত শিল্পীদের আরও বেশি করে কাজে লাগানোর কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বীরভূমের জয়দেব বাউল ও লোক উৎসবের মঞ্চ থেকে এ কথা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য শিল্পীদের আয় কিছুটা বাড়ানো। লোকশিল্পীদের ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি নিয়ে বীরভূম জেলা প্রশাসনের কাজও প্রশংসিত হয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে পর পর তিন বার জয়দেবে এই উৎসবের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্য বারের মতো এ বারও মঞ্চের সামনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ১০০০ বাউল ও লোকশিল্পী। হাজার বাউলের সমবেত সুর শুনে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী তথ্য ও সংস্কৃতির প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বিবেক কুমারকে নির্দেশ দেন, ‘‘১০ থেকে ১২ জানুয়ারি ছাত্র ও যুব উৎসব। তারপরই বিবেক উৎসব। রয়েছে বিজ্ঞান মেলা, সমস্ত মেলা ও উৎসবে লোকপ্রসার প্রকল্পে আওতাভুক্ত লোকশিল্পীদের দিয়ে অনুষ্ঠান করানো আবশ্যিক করে দিন। এ বার যত মেলা হবে, সব ক্ষেত্রেই ওঁদের ডাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে।’’ এরপরেই লোকশিল্পীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘শিল্পীরা আমাদের অহঙ্কার। আগের বার এই প্রকল্পে নথিভুক্ত শিল্পীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৪ হাজার।
এ বার সেই সংখ্যাটা ১ লক্ষ ৯৪ হাজার। আপনাদের সরকারি বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে লাগানো হয়। আগে সেটা ১০০ কোটি টাকা ছিল। সেটা বাড়িয়ে ২১০ কোটি করা হয়েছে। আরও বাড়ানো হবে।’’
গত বারই লোকশিল্পীদের আয় বাড়ানোর জন্য দু’টি ভাবনার কথা জয়দেব মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন। শুধু সরকারি অনুষ্ঠান নয়, লোকশিল্পীদের ডেকে যাতে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্থানীয় ক্লাব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা কাজ দেন, তার জন্যেও প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। শিল্পীদের ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি করতে বলা হয়। যাতে উদ্যোক্তারা সেই তালিকা থেকে শিল্পীদের ডাকতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমার শিল্পী ভাইবোনেরা আমার গর্ব। আমাদের যত গ্রাম আছে, যত রেজিস্টার্ড ক্লাব আছে, যে ক্লাবকে আমরা সাহায্য করি বা জেলায় জেলায় যারা দুর্গাপুজো, কালীপুজো বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন, জেলার শিল্পীদের ডেটা ব্যাঙ্ক তাঁদের দিয়ে দাও। এই শিল্পী ভাইবোনেদের নিয়ে অনুষ্ঠান করালে ওঁদের পরিবার বাঁচে।’’
দল বেঁধে মঞ্চের কাছে বাউলরাও।
শিল্পীরা কতটা কাজ পেয়েছেন বা কতগুলি ক্লাব বা সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা শিল্পীদের অনুষ্ঠানে ডেকেছেন, প্রশাসনিক ভাবেই বা সেই চেষ্টা কতটা করা হয়েছে এই নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। তবে সকলেই মানেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই একটা কাজ খুব দ্রুততায় এগিয়েছে, সেটা হল ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া পরিসংখ্যানও সে কথা বলছে। শুধু বীরভূমে গতবার যেখানে ‘লোকপ্রসার প্রকল্প’-এ নথিবদ্ধ শিল্পীর সংখ্যা ছিল সাড়ে পাঁচ হাজার। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর জানাচ্ছে, সেই সংখ্যাই বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৪০ জন। ‘‘কী ভাবে আমাদের ভাল করা যায়, দিদির এই ইচ্ছেটাই আমাদের মন ছুঁয়ে যায়’’— বলছেন উপস্থিত লোকশিল্পীরা।
এ দিন দশ বর্ষীয়ান বাউলকে সংবর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরভূমের কার্তিকদাস বাউল ও লক্ষণদাস বাউলেরা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে একতারা তুলে দেন। বাঁকুড়া থেকে আসা বাউল শিল্পী নাবিত মুখোপাধ্যায়, বনগাঁ থেকে আসা বিজন সরকার, তাপসী বাউলিনীরা বলছেন, ‘‘উনি (মমতা) আমাদের ভাল করার চেষ্টা তো করছেনই। সবচেয়ে বড় কথা, এত সম্মান আগে আমরা কখনও পাইনি।’’
ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী