আদ্রার মণিপুর হোম

অনুদান বকেয়া, অর্থ সঙ্কটে নাজেহাল

অনুদান নেই টানা বাইশ মাস যাবত। টাকার অঙ্কে পরিমাণ ৪ লক্ষ ৬০ হাজার। প্রায় দু’বছর ধরে এই অর্থ না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে আদ্রার মণিপুর গ্রামের বৃদ্ধাবাস। একই ভাবে অনুদান না মেলায় সমস্যায় পড়েছে গ্রামের অরুণোদয় শিশু নিকেতন নামের চাইল্ড হোম।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

আদ্রা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০১:২৪
Share:

অনুদান নেই টানা বাইশ মাস যাবত। টাকার অঙ্কে পরিমাণ ৪ লক্ষ ৬০ হাজার। প্রায় দু’বছর ধরে এই অর্থ না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে আদ্রার মণিপুর গ্রামের বৃদ্ধাবাস। একই ভাবে অনুদান না মেলায় সমস্যায় পড়েছে গ্রামের অরুণোদয় শিশু নিকেতন নামের চাইল্ড হোম। হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, অনুদানের প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে দুটি হোম।

Advertisement

পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজকল্যাণ দফতর— সর্বত্রই সমস্যার কথা একাধিকবার জানিয়েও ফল না হওয়াতে হোম দু’টির কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী ৯ অক্টোবর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিয়ে জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের সামনে অবস্থান বসবেন তাঁরা। তবে পুজোর আগে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘সমস্যাটা আমাদের নজরে এসেছে। বৃদ্ধদের হোমের জন্য অনুদানের অর্থ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থ পাওয়া যাবে, তা শুরু করা হয়েছে।’’ পুজোর আগে সেই টাকা না পাওয়া গেলে জেলা প্রশাসনই অন্য কোনও তহবিল থেকে আপাতত হোম কর্তৃপক্ষকে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

রেল শহর আদ্রার পাশেই মণিপুর গ্রামে হোম দু’টি পরিচালনা করে ‘মণিপুর কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মূলত কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারগুলির জন্যই এই হোম। ২০০৩ সাল থেকে চলছে ‘অবশেষে’ নামের বৃদ্ধদের হোম। কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত হয়ে পরিবার, সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে ২৫ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকেন এখানে। এ ছাড়াও প্রশাসনের নির্দেশে দু’জন মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ আছেন। সংস্থা সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অনুদান পেতে তাঁরা আবেদন করেন জেলা সমাজকল্যাণ দফতরে। সেখান থেকে রাজ্যের মাধ্যমে আবেদন পাঠানো হয় কেন্দ্রের কাছে। হোম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োজনীয় নথি-সহ অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন জেলায়। কিন্তু জেলা সমাজকল্যাণ দফতর থেকে সেই আবেদন কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি।

Advertisement

কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্রের সম্পাদক নবকুমার দাস বলেন, ‘‘বৃদ্ধাবাসের ক্ষেত্রে গত বছর এপ্রিল থেকে চলতি অক্টোবর পর্যন্ত কোনও অনুদানই পাওয়া যায়নি। ফলে হোম চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’’ ঘটনা হল, অন্য কোনও অনুদান পায় না হোমটি। ফলে কেন্দ্রের বৃদ্ধদের জন্য সুসংহত প্রকল্পের (ইন্টিগ্রেটেড প্রোগ্রাম ফর ওল্ড পার্সন) থেকে অনুদান না পাওয়ায় আবাসিকদের দৈনিক খাবার, ওষুধ বা পোশাকের সংস্থান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হোমের কর্মকর্তাদের। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘অন্যান্য খরচের জন্য বাজার থেকে ধার নিয়ে কোনও ভাবে চালানো হলেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ওষুধের ব্যবস্থা করতে।’’

শিশুদের হোমটির ক্ষেত্রেও ছবিটা আলাদা নয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রের খবর, চলতি বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাস অনুদান মিলছে না। অথচ এই হোমে আবাসিকের সংখ্যা দেড়শো। তাদের বেশির ভাগই কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে। তবে এই আবাসিকেরা রোগাক্রান্ত নয়। নবকুমারবাবু বলেন, ‘‘হিসাব অনুযায়ী এই চাইল্ড হোমের জন্য অনুদান বাবদ প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু কিছুই পায়নি।’’ তবে অরুণোদয় শিশু নিকেতনের ক্ষেত্রে অনুদান দেয় রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতর। বৃদ্ধাবাসের মতোই এখানেও অনুদানের জন্য প্রয়োজনীয় নথি-সহ জেলার মাধ্যমে রাজ্যের কাছে আবেদন করেছেন হোম কর্তৃপক্ষ।

নবকুমারবাবু জানান, অনুদানের অর্থেই দু’টি হোমের আবাসিকদের খাওয়া, পড়াশোনার খরচ, পোশাক-সহ সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করতে হয়। দু’টি হোম মিলিয়ে বাইশ মাস অনুদানের প্রায় ২২ লক্ষ টাকা না পাওয়ায় তাঁদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। সমস্যা আরও বেড়েছে টাকার অভাবে হোম দু’টির বিদ্যুতের বিল জমা করতে না পারায়। হোম সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা নোটিস দিয়ে জানিয়েছে বিল জমা না করলে নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হবে। নবকুমারবাবুর কথায়, ‘‘বৃদ্ধ, বৃদ্ধা বা ছোট ছেলেমেয়েদের না খাইয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে বাজার থেকে সুদের ভিত্তিতে ঋণ নিয়ে হোম কোনও মতে চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন চালানো যাবে জানি না।’’

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির অভিযোগ, জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের গড়িমিসির জন্যই এই অবস্থা। যদিও দফতরের জেলা আধিকারিক সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘চলতি বছর অগস্টে বৃদ্ধাবাসের অনুদানের জন্য হোম কর্তৃপক্ষ যে আবেদন করেছিলেন, তার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে গত ডিসেম্বর মাসে করা অনুদানের আবেদন নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’ দফতর সূত্রের খবর, গত বছর থেকে বৃদ্ধাবাসের অনুদানের আবেদনের প্রক্রিয়া অনলাইনে শুরু হওয়ায় কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিয়েছে।

শিশুদের হোমের ক্ষেত্রে অবশ্য আবেদন করার পদ্ধতির বদল হয়নি। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘মণিপুর গ্রামের চাইল্ড হোমটির আবেদন আমাদের কাছে আসার পরেই রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement