বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল।সোমবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
রাতে পর্যাপ্ত আলো জ্বলে না, প্রয়োজন অনুপাতে নিরাপত্তারক্ষী থাকেন না, রাতেও হাসপাতাল চত্বরে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ চলতেই থাকে, তার উপরে চলে রোগীর আত্মীয়দের ধমকানি-চোখ রাঙানি।— সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল তথা বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল একই সূত্রে বাঁধা। রাতের চিত্রটা জেলার সব ক’টি সরকারি হাসপাতালে একই। তারই মধ্যে রাতের পর রাত ডিউটি করে চলেছেন হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নৃশংস ঘটনার পরেও টনক নড়েনি বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের। এখানেও যে কোনও দিন এমন দুর্ভাগ্যজনক কোনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কাও করেন কর্মীরা।
বোলপুর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮-৯ জন মহিলা চিকিৎসক, ২৫০ জন নার্সিং কর্মী ও প্রায় ২০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। তাঁদের নাইট ডিউটি করতেই হয়। বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সদের একাংশ জানান, হাসপাতালের প্রধান গেটে ঢোকার পরে পাঁচতলা নতুন ভবনে আসার পথে আলোর ব্যবস্থা দুর্বল, চিকিৎসক ও নার্সিং কোয়ার্টার থেকে হাসপাতাল আসার পথটিও অত্যন্ত নির্জন। রাতে হাসপাতালে কোনও গন্ডগোল হলে ডাকাডাকি করার অনেক পরে আসেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ফলে রাতে সমস্যায় পড়েন ডাক্তার-নার্সরা।
রাতে সাধারণত রোগীর আত্মীয়দের ওয়ার্ডে প্রবেশের অনুমতি থাকে না। কিন্তু নিরাপত্তায় ঢিলেমির ফলে প্রায়ই রোগীর পরিজন রাতে ওয়ার্ডের আসেন। বহু সময় তাঁদের তরফে আবার হুমকির মুখেও পড়তে হয় চিকিৎসকদের। হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসক বলেন, “রোগীর আত্মীয়দের চাপ তো সব সময় থাকেই, তার উপরে রাতে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ড যেতে বেশ ভয় হয়। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী বা পুলিশ কেউই থাকেন না। কোনও অঘটন হলে তার দায় কার? হাসপাতালের শিশু বিভাগটির আশেপাশের অঞ্চল একেবারে ফাঁকা। সেখানে রাতে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত। বিপদের কথা জেনেও কাজ করছি।”
হাসপাতালে কর্তব্যরত এক নার্স বলেন, “কয়েকদিন আগেই এক সদ্যোজাতের মৃত্যু ঘিরে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত আমাদের এক সহকর্মী ও এক নার্সিং পড়ুয়াকে দফায় দফায় হেনস্থা করা, হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ওই সহকর্মীর জামাও ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এমন প্রায়ই হয়। বিভিন্ন সময়ে আমাদের উপরেই দোষ চাপানো হয়। হাসপাতালের ওয়ার্ডের সিসি ক্যামেরা কাজ করে না। আরজি করের ঘটনার পরে ডিউটিতে আসতেই ভয় লাগছে।”
হাসপাতালের নার্সিং সুপার বলেন, “আরজি করে আজ এই ঘটনার পরে সকলেই নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু আমাদের মেয়েরা রোগীদের পরিষেবা দিতে গিয়ে রোগীর আত্মীয়দের হাতে মার পর্যন্ত খেয়েছেন। সব সময়ই আতঙ্কে থাকি আমরা।”
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার দিবাকর সর্দার বলেন, “আমাদের এখানে নিরাপত্তার সমস্যা আগের থেকেই রয়েছে। আরজি করের ঘটনার পরে দুশ্চিন্তা কয়েক গুণ বেড়েছে। ভয়ের মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা জেলাশাসককে জানিয়েছিলাম। এখানে পাঁচজন পুলিশকর্মীর সব সময় থাকার জন্য একটি পুলিশ শিবির রয়েছে, আরজি করের এই ঘটনার পরে নিরাপত্তার খাতিরে আরও সাতজন পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হবে বলে শুনেছি। তবে তাঁরা এখনও এসে পৌঁছননি। হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার হলে আমরাও নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারি।” (শেষ)