গোপীবল্লভ সিংহ দেও। ফাইল চিত্র।
প্রয়াত হলেন শবর খেড়িয়া সমিতির প্রাণপুরুষ গোপীবল্লভ সিংহ দেও। বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দা থানার রাজনওয়াগড়ে নিজের বাসভবনে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। শেষ জীবনে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
পঞ্চকোট রাজবংশের মানুষ হয়েও অপরাধপ্রবণ জনজাতির তকমা লেগে থাকা শবরদের সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসার আন্দোলনের অগ্রদূত হিসেবেই গোপীদাকে চিনতেন সকলে। রাজনওয়াগড় দেবীপ্রসাদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশা দিয়ে জীবন শুরু করলেও শবরদের কী ভাবে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসা যায়, এই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। ১৯৬৮ সালের ৭ জানুয়ারি নিজেই গড়ে তোলেন পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি। রাজবংশের আভিজাত্য সরিয়ে শুরু হয় শবরদের নিয়ে তাঁর নতুন লড়াই।
সংস্থার অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিতের কথায়, ‘‘ইংরেজ শাসকেরা শবরদের অপরাধপ্রবণ জনজাতির তকমা এঁটে দিয়েছিল। কোথাও চুরি-ডাকাতি হলেই পুলিশ তাঁদের ধরত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও শবরদের দুর্ভোগ ঘোচেনি। এই জায়গা থেকে তাঁদের বের করে এনে সমাজের মূল স্রোতে প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু হয়েছিল গোপীদার হাত দিয়েই।’’.
পরবর্তীকালে ১৯৮৩ সালের নভেম্বর মাসে মালডির শবর মেলায় লেখিকা মহাশ্বেতাদেবী আসেন। সেই মেলাতেই মহাশ্বেতা দেবী গোপীবল্লভবাবুর প্রতিষ্ঠিত সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। মেলার মঞ্চ থেকেই তিনি গোপীবল্লভবাবুর অনুরোধে সংস্থার কার্যকরী সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তার পরে আমৃত্যু তিনি শবরদের জন্য কাজ করেছেন।
মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে বুধন শবর হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন থেকে শবরদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদে বারবার সরব হওয়া, তাঁদের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসার মতো ঘটনা এই মানুষটিকে শবরদের খুব কাছে নিয়ে আসে। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘মহাশ্বেতা দেবীকে যেমন শবর জননী বলা হতো, তেমনই গোপীদার পরিচয় ছিল শবর পিতা হিসেবে। টেলিগ্রাফের ‘হল অফ ফেম’-সহ অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।’’
শবরদের জীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য গোপীবল্লভবাবু প্রচারের আড়ালে থেকে বান্দোয়ান, বোরো, মানবাজার, বরাবাজারে ঘুরে বেরিয়েছেন। প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘‘গোপীবল্লভবাবু শবরদের উন্নয়নের কাজে নিজের বেতনের অর্ধেক টাকা দান করতেন সমিতির জন্য। সমিতির জন্য তিনি জমিও দান করেছেন।’’
সমিতির সম্পাদক জলধর শবরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা অভিভাবককে হারালাম।’’ জেলার লোক গবেষক সুভাষ রায় বলেন, ‘‘এ দিন এশিয়াটিক সোসাইটি ও প্রতীচীর যৌথ উদ্যোগে পুরুলিয়ার শবরদের সম্পর্কে একটি আলোচনাসভা ছিল। সেই বক্তৃতায় এ দিন একাধিকবার গোপীদার প্রসঙ্গ এসেছে। তারপরেই যে তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনতে হবে, ভাবিনি।’’