আলু জমিতে কীটনাশক স্প্রে। মহম্মদবাজারের ভূতুড়ায়। নিজস্ব চিত্র।
দেরিতে হলেও জাঁকিয়ে বসেছে শীত। কুয়াশায় মোড়া থাকছে সকাল। তার উপরে বুধবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির দাপট বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বীরভূমও ব্যতিক্রম নয়। এ অবস্থায় জেলার চাষিরা আবারও বিপাকে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
ডিসেম্বরের বৃষ্টিতে জমিতে পড়ে থাকা কাটা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর ঘন কুয়াশা, মেঘলা আকাশ এবং বৃষ্টি— এই ত্র্যহ স্পর্শে আলু চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। জেলা কৃষি দফতর অবশ্য জানিয়েছে, এখনও কোনও ক্ষতি হয়নি। দফতরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) শিবনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের বৃষ্টির জন্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আলু চাষ হয়েছে। ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এ বার ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।’’ তিনি জানান, এই আবহাওয়ায় আলুর নাবি ধসা রোগের আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি উপদেষ্টারা চাষিদের এ ব্যাপারে চাষিদের আগাম সতর্ক করেছেন।
জেলাতে এ বার প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষ হয়েছে। সর্ষে চাষেও তেমন ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি বলে কৃষি আধিকারিক জানিয়েছেন। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃষ্টি কেমন হবে তার উপরে চাষের ক্ষতির নির্ভর করছে। বেশি বৃষ্টি হলে, চাষের জমিতে জল দাঁড়িয়ে পড়লে, ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। আবার হালকা বৃষ্টি হলে চাষের পক্ষে উপকার হবে বলে কৃষিকর্তাদের মত। তবে জেলার বেশ কিছু এলাকার আলুচাষিরা জানান, মেঘলা আকাশ এবং ঘন কুয়াশার জন্য আলুর নাবি ধসা রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। নলহাটির পানিটা গ্রামের আলুচাষি সাধন মণ্ডল বলেন, ‘‘১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে তেজহাটি থেকে চামটিবাগান, আটগ্রাম, পোধরা, নতুনগ্রাম, পানিটা, মিয়াঁপুর, পোধরা, ইন্দ্রডাঙা— এই সমস্ত এলাকায় ব্যাপক আলু চাষ হয়েছে। এখানে নাবি ধসা রোগে আলুর গাছ মরে যাচ্ছে। এতে আলুর ফলন কমে যাবে।’’
চামটিবাগান এলাকার আলুচাষি মেহেদি হাসান রেজা বলেন, ‘‘নাবি ধসা ঠেকাতে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। তার পরেও সংক্রমণে গাছের পাতা মরে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে আলু তোলার সময়। আলুর উৎপাদন কমবে।’’ রামপুরহাট ১ ব্লকের আয়াষ পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক হারে আলুর চাষ হয়। এলাকার বসুইপাড়া গ্রামের আলুচাষি নবকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আলুকে নাবি ধসার প্রকোপ থেকে বাঁচতে কীটনাশক স্প্রে করছি। কিন্তু এই আবহাওয়া চলতে থাকলে আলু গাছ রক্ষা করা মুশকিল।’’ সর্ষে চাষেও ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি জানান।’
কুয়াশার কারণে আমের মুকুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে উদ্যান পালন বিভাগের জেলা উপ অধিকর্তা সুফল মণ্ডল জানিয়েছেন। তবে হালকা বৃষ্টিতে আম, ফুলকপি, বাঁধাকপি-সহ আনাজ চাষে লাভ হবে বলে জানান তিনি।