আলুখেতের পরিচর্যা। ওন্দার সাহাপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
দিনকয়েক আগেও শীতের থাবায় জবুথবু অবস্থা হয়েছিল বাঁকুড়াবাসীর। তবে গত কয়েক দিনে হঠাৎই বদলে গিয়েছে আবহাওয়া। জানুয়ারির শেষ লগ্নেই গরমের আঁচে বেড়েছে অস্বস্তি। বাড়তে থাকা উত্তাপের জেরে কপালে আশঙ্কার ভাঁজ জেলার আলু চাষিদেরও।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতের মারকাটারি দাপট থাকলেও হঠাৎই তা থমকে যায়। বাড়তে থাকে তাপমাত্রাও। গত বৃহস্পতিবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১.১ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে মেঘলা আকাশ ও কুয়াশার দাপটও দেখা গিয়েছে। এই বদলে যাওয়া আবহাওয়ায় জেলার আলু চাষে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় এ বারে প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। সব চেয়ে বেশি চাষ হয়েছে বিষ্ণুপুর মহকুমায়। বিষ্ণুপুর মহকুমার ছ’টি ব্লকে প্রায় ৩৯ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে জলদি আলু চাষ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৮৯৩ হেক্টর জমিতে। বাকি পুরো এলাকায় জ্যোতি আলুর চাষ হয়েছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, জলদি আলু সম্প্রতি মাঠ থেকে তোলা হলেও জ্যোতি আলুর বেশির ভাগটাই মাঠে রয়ে গিয়েছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে ধসা রোগও দেখা দিয়েছে বলে দাবি।
বিষ্ণুপুর মহকুমা কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু) তাপস ঘোষ বলেন, “আবহাওয়ার হেরফেরে অল্প কিছু এলাকায় আলুতে ধসা রোগ দেখা গিয়েছে। তবে চাষিদের আমরা সঠিক সময়ে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। এতে ওই রোগ বিশেষ বড় আকার নেবে না।”
এর পাশাপাশি জমিতে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ সচেতন করেছেন তিনি। মহকুমা কৃষি অধিকর্তা জানান, গরম বেড়ে যাওয়ায় দুপুরে কোনও ভাবেই জমিতে সেচ দেওয়া চলবে না। তার বদলে সকাল ও সন্ধ্যায় জমিতে সেচ দিতে হবে।
বিষ্ণুপুরের খড়িকাশুলির আলুচাষি নূর হোসেন মল্লিক, ঘোলারডাঙার মৈদুল মল্লিকেরা বলেন, “এমনিতে বাজারে আলুর দাম কিছুটা পড়ে গিয়েছে। তার উপর হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় ফলন কম হওয়ার ভয় বাড়ছে। ধসাও ধরছে আলুতে। এই অবস্থায় বেশি পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করতে গিয়ে চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আদৌ লাভ কতটা পাব, চিন্তায় আছি।”
বাঁকুড়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা দীপঙ্কর রায় বলেন, “আলুতে ধসা রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই। কৃষি দফতর এ নিয়ে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগরেখে চলেছে। গরম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ফলনে কিছুটা প্রভাবপড়তে পারে।”