আনাজের জমি ডুবে সোনামুখী ব্লকের গুড়ভাঙা গ্রামে (বাঁ দিকে)। অতিবৃষ্টিতে নেতিয়ে পড়েছে বেগুনগাছ। বাঁকুড়ার আইলঠ্যা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
দু’দিনের ভারী বৃষ্টি সারা মাসের গড় স্বাভাবিক বৃষ্টির ঝুলি অনেকখানি ভরিয়ে দিল। এতে ধান চাষে তৎপরতা বেড়েছে। কিন্তু নদী তীরবর্তী কিছু এলাকায় আনাজ ও ধান ডুবে থাকায় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি দফতর জানাচ্ছে, অগস্টে বাঁকুড়ায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৭৬.৮ মিলিমিটার। সেখানে এই ক’দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৮১.৪ মিলিমিটার। তাতে ঘাটতি প্রায় ৩৫%। এ বছর বৃষ্টির সার্বিক ঘাটতি ২৯%।
পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা (তথ্য) সুশান্ত দত্ত জানান, নিম্নচাপে বৃষ্টির ঘাটতি অনেকটাই মিটেছে। ৫ অগস্ট পর্যন্ত জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৯৮ মিলিমিটার। সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ৫৩৪ মিলিমিটার (গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার গড় বৃষ্টি হয়েছে ১৪৫.৯৪ মিলিমিটার)। তাতেও ঘাটতি ১০.৪ শতাংশ।
একদিকে প্রবল বৃষ্টি, অন্য দিকে দামোদরের জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছিল সোনামুখীর নিত্যানন্দপুর, ভাগলুই প্রভৃতি এলাকার জমি। ভাগলুই গ্রামের রিয়াজুল মণ্ডলের কথায়, ‘‘দামোদরের জলে সব ধান ভেসে গিয়েছে। নতুন করে বীজ তৈরি করে চাষ করার আর সময় নেই।’’ ওই এলাকায় জল জমে নষ্টের মুখে ঘিকরলা, শসা, বেগুন প্রভৃতি আনাজ। সোনামুখীর তেলরুই গ্রামের আনাজ চাষি নিতাই গরাঁই বলেন, ‘‘পুজোয় বিক্রির জন্য আনাজের চাষ করেছিলাম। সব গাছ পচে যাবে। স্বাভাবিক ভাবেই পুজোর সময় আনাজের দাম বাড়বে।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, দামোদরের জল যে সব নালা দিয়ে বয়ে যায়, সেগুলি সংস্কার না হওয়াতেই জমিতে জল জমে সর্বনাশ হল।
প্রাক্তন কৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্রের মতে, ‘‘চার-পাঁচ দিন পর্যন্ত আনাজ জমিতে জল থাকলে বা ধান ডুবে থাকলে খুব একটা ক্ষতির সম্ভবনা নেই। তবে তার বেশি সময় জল থাকলে বা কাদা জলে গাছ ডুবে থাকলে ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। সদ্য লাগানো আনাজ চারায় ক্ষতির সম্ভাবনা তুলনায় বেশি।’’
তবে বিষ্ণুপুর, জয়পুর, ইন্দাস, পাত্রসায়র-সহ অনেক এলাকাতেই জোরকদমে চলছে ধান রোয়ার কাজ।মরসুমের এই প্রথম বড় বৃষ্টিতে সবাই একসঙ্গে চাষের কাজ শুরু করায় শ্রমিকে টান দেখা দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন খাতড়ার জলহরি গ্রামের ফটিক মাহাতো। ইঁদপুরের হিরাশোল গ্রামের চাষী নারান তন্তুবায়, হিড়বাঁধের প্রদীপ্ত মহান্তি বলেন, ‘‘এই বৃষ্টিতে চাষের কাজ শুরু হয়েছে। তবে আরও বৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে।’’
নিম্নচাপের শুরুতে পাড়া, কাশীপুর, সাঁতুড়ি, নিতুড়িয়া-সহ সংলগ্ন ব্লকগুলিতে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। মানবাজার, হুড়া, পুরুলিয়া ২ ব্লকে ভারী বৃষ্টি হয়। পরের দিন পুরুলিয়া ২, জয়পুর, ঝালদা, বাঘমুণ্ডিতেও ভারী বৃষ্টি হয়। জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, নিম্নচাপের বর্ষণের আগে পর্যন্ত জেলায় লক্ষ্যমাত্রার (৩ লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টর) প্রায় আট শতাংশ জমিতে ধান রোয়ার কাজ হয়েছিল। পরে সেই কাজে গতি এসেছে। ভারী বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তিতে কাশীপুর ব্লকের জোড়াপুকুর গ্রামের চাষি হেমন্ত বাউরি।
তবে জেলার দক্ষিণে বান্দোয়ান, বরাবাজার লাগোয়া ব্লকগুলিতে এখন সে ভাবে বৃষ্টি নেই। বান্দোয়ানে ডাঙার চাষি ভরত মাহাতোর কথায়, ‘‘গত বছর আমার সাত বিঘার জমির জমির অর্ধেক অংশে বৃষ্টির অভাবে চাষ করতে পারিনি। এ বার বহাল (নিচু) জমিতেই শুধু রোয়ার কাজ করতে পেরেছি।’’ আড়শার বামুনডিহার চাষি সুবোধ সর্দারের কথায়, ‘‘দু’দিন খানিকটা বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা জমিতে রোয়ার কাজ করতে পেরেছি। বাইদ (উঁচু) জমিতে জলই নেই।’’ জেলা কৃষি কর্তা সুশান্ত দত্ত-ও জানান, আরও কয়েকবার ভারী বর্ষণের প্রয়োজন।
পুরুলিয়ায় আনাজের ক্ষতির খবর নেই বলে জানাচ্ছে উদ্যানপালন দফতর। দফতরের জেলা আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু নন্দন বলেন, ‘‘জমা জলে মাটিতে থাকা আনাজ গাছে গোড়াপচা রোগ হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে। তবে তা বোঝা যাবে মেঘ কেটে যাওয়ার তিন-চারদিন পরেই।’’