অনুষ্ঠানে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্ত। —নিজস্ব চিত্র
বিমার আওতায় থাকা শস্যের তালিকা সংখ্যা বাড়ানো, অপেক্ষাকৃত কম এবং সুনির্দিস্ট করে মরসুমের প্রিমিয়াম ধার্য করা এবং পারিবারিক কৃষি ও ব্যবসায়িক কৃষির বিস্তারিত আলোচনা হয়ে গেল বিশ্বভারতীতে এক দিনের কৃষক মেলায়। এ বারের মেলায় জেলা ও জেলার আশেপাশের ২০০ জন কৃষক হাজির ছিলেন। শ্রীনিকেতনের রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে আয়োজিত ওই মেলার উদ্যোক্তা বিশ্বভারতীর পল্লি শিক্ষাভবন। বিশ্বভারতীর রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন স্তরের ২০০ কৃষক এ দিনের আলোচনায় ছিলেন।’’
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, ফসলের বিমার প্রিমিয়াম জমা দেওয়া থেকে শুরু করে ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়েও ক্ষোভ ছিল কৃষকদের মধ্যে। আবার একাধিক এমন ফসল উৎপাদিত হত যা বিমার আওতার মধ্যে পড়ত না। সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ এবং প্রিমিয়াম নিয়ে চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হত কৃষকদের। ফসল কাটার পর নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা আবার বিমার ক্ষতিপূরণের আওতায় আসতেন না। এ হেন সমস্যার কথা মাথায় রেখে, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার চালু হওয়ার কথা কৃষকদের জানান আমন্ত্রিত আলোচকরা।
কৃষকমেলায় বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্য অধ্যাপক স্বপন দত্ত ওই আলোচনায় হাজির হয়ে, কৃষিকে লাভজনক করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের কথা জানান।
ন্যায্য দামে বীজ কেনা থেকে শুরু করে সার, জৈব সারের ব্যবহার করা এবং ফসলের সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে বাজার তৈরির উদ্যোগের কথা জানিয়ে ‘কৃষি সেচাই যোজনা’, ‘গ্রাম জ্যোতি যোজনা’, ‘নিম কোটেড ইউরিয়া’, সরকারের পাম্পসেট প্রদান, মৎস্য চাষে আগ্রহ বাড়ানোর বিষয় নিয়েও সবিস্তারে আলোচনা করেন স্বপনবাবু।
সুব্রতবাবু জানান, ওই বিমা যোজনায় কৃষকদের খরিফ ফসলে দুই শতাংশ, রবি ফসলে দেড় শতাংশ এবং ব্যবসায়িক কৃষির ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ প্রিমিয়াম অর্থ জমা দেওয়ার বিষয় এ দিনের আলোচনায় উঠে আসে। শুধু তাই নয়, ফসল কাটার পর জমিতে পড়ে থাকা অবস্থায় দুর্যোগের কারণে ফসল নষ্ট হলে ওই ফসল বিমার আওতাভুক্ত হবে বলেও কৃষদের নিশ্চিত করেন আয়োজকেরা। দ্রুত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ছবি সংশ্লিষ্ট মহলে কৃষকদের পাঠানোর কথা জানানো হয় এ দিনের আলোচনায়।
এ দিনের ওই আলোচনায় হাজির ছিলেন পল্লি শিক্ষাভবনের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সার্থক চৌধুরী, কর্মসূচির আহ্বায়ক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র মান্না প্রমুখ। যোগদানকারী ওই ২০০ জন কৃষকের মধ্যে ২৫ জনকে স্প্রেয়ার, জৈব চাষের জন্য ৩০ জনকে ধৈঞ্চা বীজ, পোলট্রি চাষিদের ৩০ জনকে মুরগিদের জল ও খাবার খাওয়ার জায়গা, শাক-সবজি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ২০ জন মহিলা চাষিকে ‘কুল চেম্বার’ দেয় বিশ্বভারতী। ওই আলোচনার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া কৃষকেরা জানান, ‘‘ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। ফসল বিমা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি। কৃষিকে লাভজনক করার বিষয়ে অনেক কিছু জানা গেল।’’