ডিভিসি-র সেচ খাল সংস্কার চলছে বড়জোড়ার পখন্নায়। নিজস্ব চিত্র
বোরো চাষের জন্য কংসাবতী জলাধার থেকে জল ছাড়া হবে না। জল কম দেবে ডিভিসিও। যা নিয়ে চিন্তায় জেলার বোরো চাষিদের অনেকে। তবে এই পরিস্থিতিতে বোরো ছেড়ে ডালশস্য ও তৈলবীজ চাষে তাঁদের উৎসাহ বাড়তে পারে, আশা জেলা কৃষি দফতরের।
কিছু দিন আগে জেলায় বৈঠক করে জলাধারে জল কম থাকায় বোরো চাষে জল দেওয়া হবে না বলে জানান কংসাবতী জলাধার কর্তৃপক্ষ। এতে বিশেষত খাতড়া মহকুমার খাতড়া, সিমলাপাল, রানিবাঁধ, রাইপুর, হিড়বাঁধ, ইঁদপুর ও সারেঙ্গা ব্লকে বোরো চাষে সমস্যা হবে, দাবি চাষিদের। কংসাবতীর জল বাঁকুড়া সদর মহকুমার ওন্দা ও বিষ্ণুপুর মহকুমারও কিছু ব্লকে যায়। বোরো চাষ নিয়ে চিন্তা দানা বেঁধেছে ওই সব এলাকার কৃষকদের মধ্যেও।
এ দিকে, গত সোমবার বর্ধমানে ডিভিসি বৈঠক করে বাঁকুড়া জেলায় বোরো চাষের জন্য মাত্র ১০ হাজার একর জমিতে জল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিভিসির জলে বড়জোড়া, পাত্রসায়র, ইন্দাস ও সোনামুখী ব্লকের বেশি কিছু জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। গত বছরে বোরো চাষের জন্য জেলার প্রায় ১২,৮৫০ একর জমিতে জল দিয়েছিল ডিভিসি। তা আরও কমে দাঁড়ানোয় কেবল বড়জোড়া ও সোনামুখীর বোরো চাষিরাই জল পাবেন বলে জানিয়েছে কৃষি দফতর। জেলা কৃষি অধিকর্তা দীপঙ্কর রায় বলেন, “ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন এ বারে বোরো চাষের জন্য জেলায় দশ হাজার একর জমিতে জল দেওয়া হবে। এতে বড়জোড়া ও সোনামুখীর জমিগুলি জল পেলেও পাত্রসায়র ও ইন্দাসের জমিগুলি চাষের জল কার্যত পাবে না।”
ঘটনা হল, জেলায় প্রায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। এই চাষে প্রচুর জল লাগে। পাত্রসায়রের একটা বড় অংশের জমিতে বোরো চাষ হয় ডিভিসি ক্যানালের জলের ভরসায়। পাত্রসায়রের বালসী গ্রামের চাষি কার্তিক পালের কথায়, “ক্যানালের পাশের জমিগুলিতে সাবমার্সিবল পাম্প নেই। ক্যানালের জল না পেলে চাষ হবে না।” বামিরা গ্রামের আদিত্য নন্দীও জানান, বোরো চাষ থেকে যে রোজগার হয়, তাতে সারা বছরের অনেক খরচ চলে। চাষ না হলে সমস্যায় পড়বেন।
আবার, বামিরা গ্রামের অনাথ বাগদীর কথায়, “অন্যের জমি লিজে চাষ করি। মালিককে টাকা দিতেই হবে। বোরো চাষ করতে না পারলে সমস্যা হবে।” অনেক চাষিরই এমন অবস্থা বলে জানান তিনি। পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নব পালের দাবি, “বোরো চাষ করতে না পারলে জেলার অর্থনীতিতে তার কুপ্রভাব পড়বে। বোরো চাষ করে মোটা টাকা রোজগার করেন এখানকার চাষিরা।” এ দিকে, ডিভিসির জল পেলেও তা চাষের জন্য পর্যাপ্ত হবে না বলেই দাবি করছেন বড়জোড়া ও সোনামুখীর চাষিদের একাংশও।
তবে বোরো চাষ কমলে জেলায় তৈলবীজ ও ডালশস্যের চাষ বাড়তে পারতে বলে আশাবাদী কৃষি দফতর। উপ কৃষি অধিকর্তা বলেন, “কৃষি দফতর বোরো চাষে উৎসাহ দেয় না। এতে অনেক বেশি জল লাগে। খরচও বেশি। তার চেয়ে চাষিরা যাতে ডাল ও তৈলবীজকে বিকল্প চাষ হিসেবে বেছে নেন, তা নিয়ে প্রচার চালাচ্ছি আমরা।” ইন্দাসের সহকারী কৃষি আধিকারিক লক্ষ্মণ হেমব্রমের তবে বক্তব্য, বোরো চাষে মোটা লাভের আশাতেই চাষিরা বিকল্প চাষে উৎসাহিত হন না।
বোরো চাষে জল দিতে না পারলেও রবি মরসুমে জল দেওয়ার কথা জানিয়েছেন কংসাবতী কর্তৃপক্ষ। কংসাবতী সেচ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার গৌরব ভৌমিক জানান, রবি মরসুমে চাষের জন্য আগামী ২ ও ২৭ জানুয়ারি এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সেচের জল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বোরো চাষের জন্য কোনও জল দেওয়া হবে না। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কৃষি, সেচ ও সমবায় স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদ বলেন, “রবি মরসুমে বাঁকুড়া জেলায় ৫৮,১০০ একর জমিতে জল দেওয়া হবে।”