শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে চাষিরা

আলুর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আর এক প্রস্থ ক্ষতির মুখে পড়লেন জেলার চাষিরা। যে সব চাষিরা আগাম ধান চাষ করেছিলেন, তাঁদের অবস্থা এবার চরম ক্ষতির মুখে। শনিবার বিকেলের ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে ‘থোড়’ হয়ে আসা ওইসব ধান গাছ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে চাষিদের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৪
Share:

ঝড়ে বিপর্যস্ত সিউড়ি-কাটোয়া সড়ক। লাভপুরের মহেষপুরে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

আলুর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আর এক প্রস্থ ক্ষতির মুখে পড়লেন জেলার চাষিরা। যে সব চাষিরা আগাম ধান চাষ করেছিলেন, তাঁদের অবস্থা এবার চরম ক্ষতির মুখে। শনিবার বিকেলের ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে ‘থোড়’ হয়ে আসা ওইসব ধান গাছ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে চাষিদের দাবি।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় বোরো ধান চাষ হয়েছিল ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লাভপুরের জামনা, ঠিবা এবং হাতিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। যার ভিতর ২০ শতাংশ জমির ধানই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

নলহাটি ১ নং ব্লকের কুরুমগ্রাম, বাউটিয়া এবং বড়লা পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষতির কবলে পড়ছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ধান। নলহাটি ২ নং ব্লকের নওয়াপাড়া, শীতলগ্রাম, ভদ্রপুর ১ এবং ২ নং পঞ্চায়েত এলাকায় ২৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ৪০ টি মৌজায় ২০/২৫ শতাংশ জমির ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। ময়ূরেশ্বর ২ নং ব্লকের ঢেকা পঞ্চায়েত এলাকারও কিছু অংশে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে তিল, মুগ, পিঁয়াজ-সহ অন্যান্য ফসলেরও। কৃষি দফতরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা। চাষিদের দাবি, অবশ্য ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েক গুন বেশি।

Advertisement

ক্ষতির এই আশঙ্কা থেকেই দৃশ্যত রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে চাষিদের। এখনও ধান চাষের দেনাই ঘাড় থেকে নামেনি অনেকের। এরপর এখনও আলু চাষের দেনা নিয়ে ভেবে কিনারা খুঁজে উঠতে পারছেন না তাঁরা। সংসার চলবে কীভাবে তা ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। এতে কার্যত হাহাকার নেমে এসেছে এলাকার অধিকাংশ চাষি পরিবারে।

ধারদেনা করে বিঘে খানেক জমিতে আলু চাষ করেছিলেন ময়ূরেশ্বরের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের গৌরাঙ্গ ধীবর। জলের দামে আলু বিক্রি করে সে ধার শোধ হয়নি। ভেবেছিলেন, ধান চাষ করে ওই ধার শোধ করবেন। সেই মতো ধারে আড়তদারের কাছে সার, সাবমার্শিবল পাম্পের মালিকের কাছে জল কিনে বিঘে প্রতি প্রায় ৬০০০ টাকা খরচ করে ২ বিঘে জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। কিন্তু সে সবই জলে গেল! বলছেন তাঁরাই!

চাষিরা বলছেন, ধানগাছে ‘থোড়’ চলে এসেছিল। আর দিন পনেরোর মধ্যেই ধান ঘরে ওঠার কথা। সেক্ষেত্রে আবাদি খরচ বাদ দিয়ে বিঘে প্রতি ৬০০০ টাকা লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তার। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে । ঝড়ের দাপটে শুয়ে পড়েছে ধানগাছ । শিলাবৃষ্টিতে কচি ‘থোড়’ ফেটেফুটে একশেষ!

গৌরাঙ্গবাবু বলেন, ‘‘আলুর দেনাই শোধ হয়নি। ধান চাষ করে ওই দেনা শোধ করব বলে ফের ধার করেছিলাম। এখন সংসার চালানো দূরের কথা, কি করে আড়তদার, পাম্প মালিকের টাকা মেটাব সেই দুচিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারছি না । কারণ ওই টাকা মেটাতে না পারলে পরবর্তী চাষের জন্যও ধার মিলবে না।’’

শিলা বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখে একই দুঃশ্চিন্তা ওই গ্রামেরই নিতাই কোনাই, নলহাটির বুজুং গ্রামের নন্দকুমারের মণ্ডলদেরও। বিঘে পাঁচেক করে জমিতে আলু চাষ করেছিলেন তাঁরা। শিলাবৃষ্টিতে তাঁদের জমির ধানও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জানালেন, কথায় আছে আশায় মরে চাষা। আমরা কোনও না কোনও আশা নিয়ে একটার পর একটা চাষ করি। আর সেই আশায় কখনও জল ঢেলে দিয়ে যায় বাজার দর, আবার কখনও বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়। কিন্তু কোনও ক্ষতিপূরণ আমরা পাই না।

জেলা সহকারি কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে জেলার বেশ কিছু জায়গায় বোরো ধান সহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ছুটির কারণে সমস্ত রিপোর্ট হাতে আসেনি। তাই ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না। ক্ষতিপূরণের বিষয়েও একই কারণে কিছু বলা যাচ্ছে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement