বিয়েতে আপত্তি, ট্রেনে ঝাঁপ যুগলের

পড়শি যুবককে ভালবেসে ফেলেছিল দশম শ্রেণির ছাত্রীটির। উভয়ের স্বপ্ন ছিল ঘর বাঁধার। তারই মধ্যে ওই ছাত্রীর অন্যত্র বিয়ের কথাবার্তা প্রায় পাকা করে ফেলে পরিবার। যা একেবারেই মানতে পারেনি ওই যুগল। তা বোধহয় কেউ-ই আঁচ করতে পারেননি। যখন পারলেন, তখন সব শেষ। ছুটে আসা ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে নিজেদের শেষ করে দিলেন ওই যুগল! মঙ্গলবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনার দুঃসংবাদ টলিয়ে দিয়েছে দুবরাজপুরের মহুলা গ্রামের হতভাগ্য দুই পরিবারকেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৯
Share:

মৃত দেবাশিস বাগদি ও শ্রাবণী বাগদি। —নিজস্ব চিত্র

পড়শি যুবককে ভালবেসে ফেলেছিল দশম শ্রেণির ছাত্রীটির। উভয়ের স্বপ্ন ছিল ঘর বাঁধার। তারই মধ্যে ওই ছাত্রীর অন্যত্র বিয়ের কথাবার্তা প্রায় পাকা করে ফেলে পরিবার। যা একেবারেই মানতে পারেনি ওই যুগল। তা বোধহয় কেউ-ই আঁচ করতে পারেননি। যখন পারলেন, তখন সব শেষ। ছুটে আসা ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে নিজেদের শেষ করে দিলেন ওই যুগল!

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনার দুঃসংবাদ টলিয়ে দিয়েছে দুবরাজপুরের মহুলা গ্রামের হতভাগ্য দুই পরিবারকেই।

পূর্ব রেলের অন্ডাল-সাঁইথিয়া শাখার পাঁচড়া স্টেশনের কাছে আপলাইন থেকে এ দিন সকালে ওই যুগলের ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ। রেল পুলিশের খাতায় মৃতদের নাম শ্রাবণী বাগদি (১৮) এবং দেবাশিস বাগদি (২০)। সিউড়ি হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরেই দেহগুলি তুলে দেওয়া হয়েছে পরিবারের হাতে। গ্রামবাসীর আক্ষেপ, সম্পর্ক যখন তৈরিই হয়েছিল, দু’টি পরিবার মেনে নিলেই হত। আড়ালে আরও একটি প্রশ্নও তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, শ্রাবণী সাবালিকা নয়। তা চাপা দিতেই পুলিশের খাতায় ১৮ বছর বয়স লেখানো হয়েছে। আদতে কুখুটিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বয়স বড়জোর ১৬ বছর। কোনও প্রমাণপত্র না দেখেই পুলিশ কীভাবে শ্রাবণীকে সাবালক বলে মেনে নিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দুবরাজপুর থানার বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মহুলা গ্রামে দেবাশিস এবং শ্রাবণীর বাড়ির দূরত্ব বড়জোর ৫০ গজ। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শান্ত স্বভাবের শ্রবণীর সঙ্গে বেশ কিছু দিন থেকেই প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল পড়শি যুবক, পেশায় কাঠমিস্ত্রি দেবাশিসের। শ্রাবণীর বাবা নকুল বাগদি এবং দেবাশিসের বাবা ধনঞ্জয়বাবু উভয়েই পেশায় চাষি এবং দিনমজুর। পাড়ার ছেলের সঙ্গে মেয়ের এই সম্পর্কটা খুব একটা গুরুত্ব দিতে রাজি হননি নকুলবাবুরা। বরং মেয়ের বিয়ের ঠিক করেছিলেন দুর্গাপুরে একটি কারখানায় কর্মরত এক যুবকের সঙ্গে। অন্য দিকে, তাঁদের তরফে সমস্যা না থাকলেও মেয়েপক্ষের দিক থেকে সাড়া না পাওয়ায় চুপচাপই ছিল ধনঞ্জয়ের পরিবার। কিন্তু ছেলেমেয়েরা যে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা কোনও পরিবারই দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।

পরিবার সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যা থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না শ্রাবণীকে। বিস্তর খোঁজাখুঁজি হয় গোটা এলাকায়। যাওয়া হয় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও। একই ভাবে যখন জানা যায় বাড়িতে নেই দেবাশিসও। তখন প্রতিবেশী ও দুই পরিবার একটা আন্দাজ করে নিয়েছিলেন, হয়তো ওরা পালিয়ে বিয়ে করবে। কিন্তু, মঙ্গলবার সকালে দুঃসংবাদটা পেয়ে হতভম্ব হয়ে যান সকলে। নিজেদের সন্তানদের এমন পরিণতি দেখে কথা বলার জায়গায় ছিলেন না দু’টি পরিবারের সদস্যেরাও। শ্রাবণীর মা সান্ত্বনা বাগদি এবং দেবাশিসের মা অঞ্জলি বাগদিদের সম্বল ছিল শুধুই কান্না। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ বা উভয়ের সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে অবশ্য কিছু বলতে চাননি উভয় পরিবারের সদস্যেরা। দুই পরিবারেরই সদস্যদের আক্ষেপ, ‘‘ওরা যদি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল, তখন মরতে গেল কেন!’’

এ দিন খবর ছড়াতেই ছুটি হয়ে যায় শ্রাবণীর স্কুল। শিক্ষকেরা সকলেই মৃত ছাত্রীর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন। শিক্ষকদের একাংশ শ্রাবণীর অভিভাবকদের বোঝান, প্রথমত নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার ভাবনাটা ঠিক নয়। বর্তমান সামজে বিয়ের ব্যবস্থা করার আগে ছেলে এবং মেয়ের সম্মতি নেওয়াটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তা করা হলে এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো। মেয়ের দাদু দুলাল বাগদি যদিও বলছেন, ‘‘এত তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে দেওয়ার কথা নয়। নাতনি পড়াশোনা করছিল। আমরা শুধু ছেলে পছন্দ করে রাখতে চেয়েছিলাম। এর বেশি কিছু নয়। ওদের যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটাও তেমন ভাবে জানাও ছিল না।’’

এ দিকে প্রাথমিক তদন্তে রেল পুলিশ ধারণা, সারা রাত বাইরে থাকলেও আত্মহত্যার ঘটনাটি ভোরের দিকে কোনও এক সময় ঘটেছে। পালিয়ে তারা কোনও বন্ধুর বাড়িতে যাননি। মনস্তাত্বিক যুদ্ধে হেরে শেষে আত্যহত্মার পথই বেছে নিয়েছেন। এ দিন ভোরে দুবরাজপুর স্টেশন পেরিয়ে যাওয়ার সময়ে এক যুগল লাইনে ঝাঁপ দিয়েছেন, একটি মালগাড়ির চালক এমন ঘটনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বলে রেল সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement