খুনে ধৃত মায়া অঙ্কুর ও সঞ্জিত ডোম। নিজস্ব চিত্র
ধানখেতে দেহ মিলেছিল সদাইপুর থানার পারুলিয়ার বাসিন্দা নবীন অঙ্কুরের। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই ঘটনার কিনারা হয়েছে দাবি করে পুলিশ গ্রেফতার করল নিহতের স্ত্রী ও তাঁর ‘প্রেমিক’কে। পুলিশের দাবি, সেই ‘প্রেমিক’ আবার নিহতের স্ত্রীর সম্পর্কিত বেয়াই। নিজের মেয়ের সেই সম্পর্কিত শ্বশুরের সঙ্গেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন ওই মহিলা। প্রতিবাদ করায় খুন হতে হয়েছে নবীনকে।
বুধবার সকালে পারুলিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে দেড়শো মিটার দূরে নবীনের (৪৭) দেহ মেলে। চোখ-কানে আঘাতের চিহ্ন। গলায় কালো দাগ ছিল। এলাকাবাসীর দাবি ছিল খুন হয়েছেন তিনি। প্রাথমিক তদন্তে একই অনুমান ছিল পুলিশেরও। বক্তব্য অসঙ্গতি থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল নবীনের স্ত্রী মায়া অঙ্কুরকে। পুলিশের দাবি, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মায়ার পরকীয়ার কাহিনি সামনে আসে। বুধবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় মায়া ও তাঁর সঙ্গী (তথা সম্পর্কিত বেয়াই) সঞ্জিত ডোমকে। সঞ্জিতের বাড়ি পাড়ুই থানার নিতুরিতে। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক ভাবে অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই দু’জন। বৃহস্পতিবার দু’জনকে সিউড়ি আদালতের তুলে ৬ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হবে বলে সূত্রের খবর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পারুলিয়া গ্রামের ডোমপাড়ায় সপরিবার থাকতেন নবীন। ছেলে পিন্টু ও মেয়ে শিউলির বিয়ে হয়েছে। মঙ্গলবার, দোলের দিন শিউলি ও পিন্টু শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। বাড়িতে ছিলেন মায়া। মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফিরেছিলেন নবীন। পরদিন সকালে পুকুরে যাওয়ার পথে স্থানীয় বাসিন্দারা ধানজমিতে তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। তদন্তকারীদের দাবি, রাতে বাড়ি ঢুকলেও স্বামী কখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন বা সকালে তাঁকে দেখতে না পেয়ে কেন খোঁজ করেননি, এ-সব প্রশ্নের সদুত্তর ছিল না মায়ার কাছে। তখনই তাঁর উপরে সন্দেহ পড়ে। তা ছাড়া, দেহ যেখানে পড়েছি, সেটা ঘটনাস্থল নয় বলেও আন্দাজ করেছিল পুলিশ। কারণ, মৃতদেহে বেশ কিছু ক্ষতচিহ্ন থাকলেও সেখানে রক্তের দাগ মেলেনি।
পুলিশের দাবি, এই সূত্র ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ভেঙে পড়েন মায়া। জেরার মুখে মায়া জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মেয়ের সম্পর্কিত শ্বশুরের সঙ্গে সেই সময় থেকে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়। এই নিয়ে স্বামী নবীনের সঙ্গে বহুবার ঝামেলা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় মায়া জানান, দোলের দিনও বাড়ি ফাঁকা থাকার কথা নিতুরি থেকে সঞ্জিত মায়ার কাছে আসেন। নবীন রাত ১০টা নাগাদ ঘরে ঢুকে তাঁদের দেখে খেপে যান। বচসা শুরু হয় দু’পক্ষের। সেই সময় মায় ও সঞ্জিত মিলে মারধর করার পরে, ছাগল বাঁধা দড়ি দিয়ে নবীনের শ্বাসরোধ করে খুন করেন বলে পুলিশের দাবি। মাঝরাতে কৃষিজমিতে দেহ ফেলে দিয়ে আসা হয়।
এর পরেই পাড়ুই থেকে গ্রেফতার করা হয় সঞ্জিতকে। তবে যে দড়িতে ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছে, সেটা পুলিশ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি।