বিস্ফোরণ বেগুন তুলতে গিয়ে, দাবি আহত তৃণমূল নেতার

মঙ্গলবার গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেল, গ্রামবাসীদের চোখে মুখে আতঙ্ক।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ 

পাড়ুই শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩৩
Share:

আহত: শেখ মুস্তাক। নিজস্ব চিত্র

গোটা গ্রামে থমথমে পরিবেশ। কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। গ্রামের রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। সোমবার বিকেলে বোমা ফেটে এক তৃণমূল নেতা-সহ কয়েক জনের জখম হওয়ার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে এমনই ছবি চোখে পড়ল পাড়ুইয়ের লেবড়া গ্রামে। আহত নেতার দাবি, জমি থেকে বেগুন তুলতে গিয়ে বোমা ভর্তি ব্যাগে তাঁর হাত পড়ে যাওয়ায় বিস্ফোরণ হয়। যদিও বিজেপি-র অভিযোগ, বোমা বাঁধতে গিয়েই তা ফেটে বিপত্তি বেধেছে।

Advertisement

মঙ্গলবার গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেল, গ্রামবাসীদের চোখে মুখে আতঙ্ক। কিছু মহিলা একটি বাড়ির দরজার সামনে বসে ছিলেন। তাঁদের সোমবারের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেও কিছু জানাতে চাইলেন না। গ্রামের কিছুটা ভিতরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বললেন, ‘‘আমরা এক প্রকার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। এই গ্রামে বোমা বাঁধার কাজ নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এই ধরনের অসামাজিক কাজ করে আসছে গ্রামের কিছু লোক। ওদের নামে থানায় অসামাজিক কাজের একাধিক অভিযোগও রয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ওই লোকজন শাসকদলের ছাত্রচ্ছায়ায় রয়েছেন। গ্রামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘অনেক বছর ধরে পাড়ুইয়ে বোমা-গুলির লড়াই দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। আমরা চাই গ্রামে অবিলম্বে শান্তি ফিরে আসুক।’’

সোমবার বিকেলে লেবড়া গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি পুকুর পাড়ে বোমা বিস্ফোরণ হয়। বিজেপি-র অভিযোগ, এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তাক ওরফে বাপি কয়েক জনকে নিয়ে বোমা বাঁধছিলেন। এমন সময় বিস্ফোরণ ঘটে। বাপির দুই হাতের আঙুল উড়ে যায়। বাপির সঙ্গে থাকা বেশ কয়েক জন গুরুতর আহত হন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। আহত মুস্তাককে সোমবার রাতেই ভর্তি করানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে তিনি ভর্তি রয়েছেন। তাঁর দু’টি হাতেই আঘাত রয়েছে। মঙ্গলবার হাসপাতালে শুয়ে তিনি অবশ্য দাবি করলেন, নিজের জমিতে বেগুন তুলতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে দেখেন, জমিতে একটি ব্যাগে বোমা রয়েছে। যখন তিনি ব্যাগটি বার করে আনছিলেন, তখনই জমির আলে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। তার জেরেই বোমা ফেটে আহত হয়েছেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা জানান, অস্ত্রোপচার করে ওই ব্যক্তির ডান হাতের অংশ বাদ দিতে হয়েছে। পরে বাঁ হাতের ক্ষেত্রেও তা করতে হতে পারে। আপাতত রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল।

Advertisement

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুরনো কিছু খবরের কাগজ, বোমার সুতলি এবং পাথর পড়ে আছে। তখনও বারুদের গন্ধ রয়েছে। এই ঘটনার পরে অনেক পুরুষ গ্রামছাড়া। গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলি এদিন খোলা থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন অনেক অভিভাবক। ফলে, এ দিন ওই দুই জায়গায় পড়ুয়াদের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

পাড়ুই অঞ্চলের বিজেপি নেতা শেখ সামাদের অভিযোগ, ‘‘ওই বোমা তৃণমূলের লোকজনই বাঁধছিল। তৃণমূলের রাজত্বে পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে। তা-ও পুলিশের উপর ভরসা রাখছি। আমাদের দাবি, এই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’

পাড়ুইয়ের বাসিন্দা, জেলা তৃণমূলের নেতা মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই । বিজেপি আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে। পাড়ুই অঞ্চলে তৃণমূলের বোম বাঁধার প্রয়োজন নেই।’’

পুলিশ জানায়, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কোনও পক্ষের তরফ থেকে লিখিত অভিযোগ হয়নি। পুলিশ অবশ্য ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

সহ প্রতিবেদন: সুপ্রকাশ চৌধুরী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement