নজর: চলছে শিল্পোৎসবের প্রদর্শনী। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বভারতীর কর্মী পরিষদের উদ্যোগে এ বারও বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ‘শিল্পোৎসব’ হল। সোমবার সকালে শিল্পোৎসবের মূল অনুষ্ঠানটি হয় পাকুড়তলায়। ছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন, জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু সহ বিশ্বভারতীর অন্য আধিকারিকেরা। এ বছর কাঁসা-পিতল শিল্পী হারাধন মেহতরীকে শিল্পোৎসবের সম্মাননা জানানো হয়েছে। শিল্পসদনে একটি প্রদর্শনীরও উদ্বোধন হয় সোমবার। এ ছাড়াও ছিল সাঁতার প্রতিযোগিতা এবং ফুটবল খেলার প্রদর্শনী।
বিশ্বভারতীর সূত্র জানাচ্ছে, ১৯২২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী এবং শিল্পী আদ্রে কারপালসের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ‘বিচিত্রা’। উদ্দেশ্য ছিল, বাংলার লোপ পাওয়া কারুশিল্পের পুনরুদ্ধার। তাঁদের এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করেছিলেন কবিগুরু। ১৯২৮ সালে ‘বিচিত্রা’ চলে আসে শ্রীনিকেতনে। তখন কাঠের কাজ, মাটির কাজ, সেরামিকের কাজ হত। কিছু পরে বাটিকের কাজও শুরু হয়। ক্রমেই শান্তিনিকেতন সংস্কৃতিতে এবং শ্রীনিকেতন কারুশিল্পের ঐতিহ্যের প্রসারে সমৃদ্ধ হল।
গ্রামের মানুষদের ধর্মভাবনায় যাতে আঘাত না পায়, সে দিকে খেয়াল রেখে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত বিশ্বকর্মা পুজো হত ঘটে। ছাত্রছাত্রীদের বানানো শিল্পকর্ম ঘটের পাশে রেখে পুজো করা হত। সেই সময় শিল্পোৎসব নাম ছিল না। কিন্তু, ১৯৪২ সালে একটি ঘটনা ঘটে। সে বারে জয়পাল মেহেতা নামে কলাভবনের এক ছাত্র চামড়ার জুতো সেলাই করেছিলেন। সেটিও যেহেতু শিল্পকর্ম, স্থান পায় ঘটের পাশেই। কিন্তু, সুরুল থেকে আসা পুরোহিত পাশে জুতো রাখা অবস্থায় পুজো করবেন না বলে জানান। সেই সময় নন্দলাল বসু পুরোহিতকে বলেছিলেন সেটিও যেহেতু ছাত্রের তৈরি শিল্পকর্ম, ওখানেই থাকবে। এর ফলে পুজো না করেই চলে যান পুরোহিত। তখন জয়পাল মেহেতা বলে ওই ছাত্রকেই নন্দলাল বসু পুজো করতে বলেন। তিনি নিজের মতো করে ফুল দিয়ে পুজো করেন এবং অন্য ছাত্রছাত্রীরা রবীন্দ্রসঙ্গীত ধরেন। ১৯৪৩ সালে সুশীল ভঞ্জ সেতার বাজিয়ে পুজো করেন। এর পর ১৯৪৪ সালে শিল্পোৎসব নামে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে উৎসব শুরু হয়। সেই থেকেই দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, ‘‘এই একটিই উৎসব যা কবিগুরুর মৃত্যুর পরে শান্তিনিকেতনে শুরু হয়েছে। মানুষের যেমন প্রাণ আছে, যন্ত্রেরও আছে। তাই এই একটা দিন শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত যন্ত্রগুলিকে বিশ্রাম দেওয়া হয় এবং সম্মান জানানো হয়।’’ জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর কথায়, ‘‘উৎসবটি দেখে মুগ্ধ এবং অভিভূত। গ্রামের মানুষদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য এটি বিশ্বভারতীর খুবই ভাল একটি উদ্যোগ। রাজ্যের পর্যটনেও এর গুরুত্ব আছে।’’